শহুরে বাংলার কলকাতার গোঁসাইপাড়ায় প্রতিদিনের মতোই গঙ্গার পাড়ে আড্ডা চলছে। বুড়ো, বড়-ছোট, হিন্দু, মুসলিম, ক্রিস্টান অবিভেদে আড্ডা চলে কলকাতার এই গোঁসাইপাড়ায়। সুশোভন, দ্রাবিড়, তৌফিক ও রিচাড সবাই খুব ভালো বন্ধু। অন্যান্য বিকালের মতোই আড্ডা চলছে… সেই বিকালে বন্ধুদের মধ্যে কেউ চেলসি ম্যানচেস্টার ক্লাব ফুটবলের কথা বলছিলো, কেউ বা মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল নিয়ে আবার কেউ বা ইন্ডিয়ার নেক্সট টেস্ট সিরিজ নিয়ে ।
একেই প্রচন্ড গরম, তার ওপর জল তেষ্টা পাওয়ায় তৌফিক জল খেতে কলের ধারে উঠে গেল। সেই খানে সে লক্ষ করলো যে একটা অর্ধননগ্ন পাগল কি সব প্রলাপ বকছে। রাস্তায় যাকেই পাচ্ছে ধরে জিজ্ঞেস করছে' স্বর্গ কোথায়??' সে স্বর্গে যেতে চায়। রাস্তার মুচি, মেথর, তেলেভাজার ব্যবসায়ী এমনকি তৌফিক কেউই তার তালিকা থেকে বাদ গেল না। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পাগল প্রলাপ বকছে বলে পাত্তা দিচ্ছে না আর কেউ পাত্তা দিলেও বলছে যে সে জানে না স্বর্গ কোথায়!!
সকলের মতোই তৌফিক ও তাকে জানায় যে স্বর্গ কোথায় সে বলতে পারবে না। তার পর সে যথারীতি আবার তাদের আড্ডায় ফিরে আসে। কিছুক্ষণ পর সেই পাগলটি হঠাৎই তাদের সামনে উপস্থিত হয় ও সেই একই প্রশ্ন করতে থাকে যে' স্বর্গ কোথায়!? কোথায় গেলে স্বর্গ এর দেখা পাবে !!' তৌফিক একটু অক্ষুন্ন হয়েই জবাব দিল যে' আপনাকে তখন ও বলেছি আর এখন ও বলছি আমি বা আমরা স্বর্গ কোথায় জানি না '
কিন্তু এই পাগলটি সামান্য বিচলিত হয়ে ক্রমশ সবাই কে জিজ্ঞেস করতে থাকে যে' স্বর্গ কোথায়???' তার পর বিরক্তি হয়েই সকলে একপ্রকার উত্তর দিতে বাধ্যহয়।
সুশোভন সে হিন্দু সম্প্রদায়ের সে বলে ' স্বর্গ একটি ধর্মীয়, বিশ্বতাত্ত্বিক, বা আধিবিদ্যক স্থান যেখানে ধর্মগুরু মতে দেবতা, দেব-দূত, আত্মা জাতীয় সত্তা, সন্ত অথবা পূজিত পিতৃপুরুষগণ উদ্ভূত, রাজাসনে অধিষ্ঠিত বা বাসরত। মানুষ মর্ত্যলোকে পুন্য করলে সে মরণের পর স্বর্গ লাভ করে।' এবং সে আরো বলে 'হিন্দু-পুরাণ মতে জীবিত অবস্থায় স্বর্গ লাভের জন্য কৈলাস - মানস সরোবর ভ্রমণ অনিবার্য'। পাগলটি স্বভাবতই অতো বুজতে না পেরে আবারও তৌফিক ও রিচার্ড কে আবারো প্রশ্ন করে বসে' স্বর্গে কি ভাবে যাওয়া যায়!? ' তৌফিক এবং রিচার্ড ও একপ্রকার বাধ্য হয়েই নিজেদের মত করে উত্তর দিতে থাকে ।
তৌফিক বলে - ' জনাব আপনার স্বর্গ, যা কোরআন মতে জান্নাত হলো পার্থিব জীবনে যে সকল মুসলিম আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলবে এবং পরকালীন হিসাবে যার পাপের চেয়ে পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে তাদের জন্য আল্লাহ যে সকল আবাসস্থল প্রস্তুত রেখেছেন। মানুষের মধ্যে শান্তি সৃষ্টি করা মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ছড়ালে তবেই জান্নাত প্রাপ্তি হয়। জান্নাত প্রাপ্তির জন্য সৌদি আরবের মক্কা-মদিনা ভ্রমণ করতে পারেন' এই বলে তৌফিক চুপ করে গেল|
এর পর রিচার্ড ও বললো তার মতো করে …
সে বলল - ' স্বর্গ বা হেভেন হলো Jesus ও তার স্বর্গদূত পরম্পরাগত পবিত্র স্থান।যে সমস্ত ক্রিস্টানরা বিশ্বাস করে Jesus ভগবানের পুত্র ও নিজের সম্পূর্ণ জীবনে সমস্ত ভুলের যে ক্ষমাপ্রার্থী তারাই স্বর্গ বা হেভেন জন্য যোগ্য এবং Christianity এর প্রবিত্র গ্রন্থ The holy Bible অনুযায়ী জেরুজালেম মর্তের সবচেয়ে প্রবিত্র স্থান।'
আরো সামান্য দু-একটা কথা বলে রিচার্ড থামলো।
তিন বন্ধুর কথা শুনে পাগলটি এইটুকু বুজতে পারলো যে সমস্ত জায়গার কথা এরা বললো সেই সব কয়টি বিদেশে বা বহুদূরে । এত কিছুপর ওই পাগলটি জানায় যে সে আর ধৈর্য ধরতে পারছে না সে খুব তাড়াতাড়ি স্বর্গে যেতে চায় ।
তখন হঠাৎই সুশোভন এক বিখ্যাত প্রবাদ বললো' যদি পৃথিবীতে স্বর্গ থাকে তবে তা এখানে কাশ্মীরে '। সুশোভনের এই কথাই রিচার্ড ও তৌফিক দুজনেরই সাই দিলো ও তাকে কাশ্মীর যেতে বললো। এর পরই পাগলটি হেঁসে উঠলো ও বললো - ' ওরে বোকা গাধার দল স্বর্গকে উপভোগ করবার জন্য কাশ্মীরে তিন তিনবার গেছি, শেষ বারে আতঙ্কবাদীদের গুলি তে আমার বউটা ও আমার তেরো বছরে মেয়ে টা মারা যায় !!! আর তোরা বলছিস আমায় যে স্বর্গ খুজতে কাশ্মীর যেতে!!?? '
' আমার বউটা ও মেয়েটা মারা যাবার পর অনেকে বললো যে তারা নাকি এখন স্বর্গবাসী !! তাই আমি স্বর্গ খুঁজে বেড়াচ্ছি। মেয়েটাকে একটু দেখবো বলে আমি স্বর্গ খুঁজছি আর তোরা লুচ্চার মত আমার সঙ্গে ফাজলামি করছিস যে স্বর্গে যেতে হলে কাশ্মীরে যেতে হবে!!! তোদের মত জোয়ান ছেলেরা স্বর্গ আর নরকের মধ্যে পার্থক্য ও জানে না ছি ছি ভেবেও লজ্জা লাগে '। তার পর তিন বন্ধু পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কারণ এই সব শোনার পর তারা প্রত্যেকেই ভাষাহীন হয়ে পড়েছে। পাগল টি যেতে হাসছে আর বলছে' কাশ্মীর নাকী স্বর্গ ?? স্বর্গ কোথায় আমি যেতে চাই মেয়ে টাকে দেখবো একটু বহুদিন দেখি না !! '
*********