বছর দুয়েক আগে দাদা ও বন্ধুদের সাথে শিমুলতলা (বিহার) ঘুরতে গিয়েছিলাম। জায়গাটি অনেকের কাছে ভূতুড়ে, আবার অনেকের কাছে অ্যাডভেঞ্চারাস.আবার অনেকে এই ব্যস্ততম জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে ওই ছোট্ট পাহাড়ি এলাকায় ২ দিন হাওয়া বদল করে আসে।
আমাদের কিছু অ্যাডভেঞ্চার ও ভৌতিক অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও কিছু কল্পনা নিয়ে আমার এই গল্প আমি লিখেছি।
সময় ও চরিত্র(কাল্পনিক/নাম পরিবর্তিত) পরিবর্তিত।
// শিমুলতলা //
প্রায় বছর চারেক পর ফ্যামিলি ছাড়া একা একা ঘুরতে বেরোলাম । ঘুরতে বেরোনো বলা ভুল । আমাদের ব্যস্ত শিডিউলে ঘুরতে যাওয়ার মত সময় কোথায়....!
কয়েকদিন ধরেই শরীর খারাপ ছিল । ডাক্তারে বললো বায়ু পরিবর্তনের জন্য ।
ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড অর্ককে সে কথা জানাতেই ও পরামর্শ দিলো ওর কাছে যাওয়ার জন্য । ও চাকরি করে বিহারে । আমিও এক পায়ে রাজি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম ।
১৫জুন সময়মত ট্রেনে চেপে রওনা দিলাম । গন্তব্যস্থল -’শিমুলতলা’
অর্ক বলেছিল শিমুলতলা জায়গাটা নাকি একটা হন্টেড প্লেস এর মত । ছোট থেকেই আমি একটু ডানপিটে হওয়ায় হাওয়া বদলের জন্য শিমুলতলাকেই বাছলাম । ঘোরাও হবে আর ভাগ্যে থাকলে ভূত দর্শনও।
অর্ক অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিল দিন সাতেকের । কথা ছিলো ও একেবারে শিমুলতলায় গিয়ে হন্টেড বাংলোয় উঠবে।
১৬ জুন যথারীতি পৌঁছে গেলাম ডেস্টিনেশন শিমুলতলায় । স্টেশনে যখন ট্রেন থামলো তখন রাত প্রায় ৯টা ।
স্টেশন থেকে বাংলো প্রায় আধঘন্টার রাস্তা ।
ট্রেন থেকে নেমে অর্ককে ফোন করতে গিয়ে দেখি ফোনের চার্জ কমে ১৫% এ এসে ঠেকেছে । ওর থেকে ঠিকানা সব জেনে রিকশার খোঁজ করতে লাগলাম ।
জায়গাটা যেমন হবে ভাবছিলাম ঠিক তার উল্টো । রাত ৯টা যেমন মহানগরী কলকাতার সন্ধ্যারাত, শিমুলতলায় যেন রাত 9টাতেই গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে । মফস্বল এলাকা, আলো বেশ কম । তার উপর রাস্তায় লোকজনও নেই বললেই চলে ।
রাস্তার পাশের একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম । লোকটা দোকান গোটাচ্ছিলো হবে । চা খেতে খেতে আমাদের বাংলোর নাম বলতেই লোকটার মুখে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখলাম । যেন খুব ভয় পেয়েছে সে । কিছু যেন বলতে গিয়েও থেমে গেল । শুধু আধ ভাঙা বাংলায় বললো -" সাব, ও জায়গাটা একদম খারাব আছে । জিতনি জলদি পারেন অন্য ভিলা খুঁজে নিন । "
লোকটার আচরণ কেমন যেন অদ্ভুত ঠেকলো । সে তাড়াতাড়ি তার দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে চলে গেল ।
এখন পুরো রাস্তায় আমি একা । আবছা অন্ধকারে মৃদু আলো জ্বলছে আর পিছন থেকে শুনতে পাচ্ছি দূরে কোনো জঙ্গল থেকে ভেসে আসছে শেয়াল - কুকুরের ডাক ।
টানা আধঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও যখন কোনো রিকশা দেখতে পেলাম না, তখন কিছুটা নিরুপায় হয়েই অর্কর দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী হাঁটতে শুরু করলাম । স্টেশন থেকে বেশ কিছুটা হেঁটে আসার পর একটা জঙ্গল পড়লো । দেখে বেশ ঘনই মনে হলো । নিকষ কালো আঁধার যেন সব রং লুকিয়ে রেখেছে ওই জঙ্গলে ।
আমি বরাবরই সাহসী ধরনের। তবে কেন জানি না, ওই জঙ্গলে ঢোকার ঠিক মুখে গা ছমছম করতে লাগলো । সাহস করে ঢুকেও পড়লাম । মিনিট দশেক হেঁটেছি ঠিক সেইসময় মনে হলো আমার ঠিক পিছনেই কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে । পিছন ঘুরতেই দেখি একটা রিকশাওয়ালা কোথা থেকে যেন এসে হাজির । হঠাৎ দেখে বেশ কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম ।
বললাম - " কে তুমি ? ফলো করছো কেন আমাকে ? "
সে তার খোঁনা গলায় কি উত্তর দিলো ঠিক বোঝা গেল না ।
লোকটা জিগেস করলো - "কুথায় যাবেন সাব ? "
আমি বাংলোর নাম বলতেই সে রিকশায় উঠতে বললো । সাত-পাঁচ না ভেবেই উঠে বসলাম । রিকশা চলতে লাগলো মৃদু গতিতে । ২দিনের জার্নি তে টায়ার্ড ছিলাম খুব। তাই রিকশায় উঠতেই পাশ থেকে আসা ঠান্ডা হাওয়ায় চোখটা বুজে এলো ।
মিনিট ১৬-১৭ হবে, মৃদু তন্দ্রায় আমি । হঠাৎই একটা বরফ শীতল ঠান্ডা স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেল আমার ।
ধড়মড় করে উঠে দেখি রিকশাওয়ালাটা ডেকে বলছে এর বেশি সে আর রিকশা নিয়ে যাবে না । সামনেই বাংলোর গেট দেখতে পাচ্ছিলাম । তাই জোর করলাম না ওকে আর । পিছন ফিরে যেই ওকে টাকাটা মেটাতে যাব, অমনি দেখি রিকশাওয়ালাটা ঠিক আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে ।
তার চোখ গুলো ভয়ঙ্কর লাল । যেন আগুনের গোলা বেরিয়ে আসছে ।সে টাকা নেওয়ার জন্য আমার হাত চেপে ধরলো । তার হাত গুলো বরফের মত ঠান্ডা । আমি ভয়ে দু পা পিছিয়ে আসতেই উল্টে পড়লাম একটা পাথরের গায়ে। তারপর আর জ্ঞান নেই । জ্ঞান হারানোর আগে রিকশাওয়ালাটাকে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখেছি, আর শুনেছি তার তীক্ষ্ণ একটা চিৎকারের হাসি ।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি বাংলোয় শুয়ে । মাথার কাছেই অর্ক বসে ।
রামলাল একগ্লাস গরম দুধ এনে দিলো । সেটা খেয়ে বেশ আরাম বোধ করলাম ।
অর্ককে গতকাল রাতের সমস্ত ঘটনা বললাম ডিটেলসে । ও শোনার পর হাহা করে হেসে বললো -" তোকে বরাবর সাহসী বলেই জানতাম । তা, তুইও ভুতের ভয় পেলি ।
আরে ওসব কিছুই না, স্রেফ তোর ঘুম চোখের ভুল । দেখ হয়তো লোকটা গাঁজা খেয়ে এসেছিল তাই চোখগুলো লাল ছিলো আর তুই ভয় পেয়ে কিনা অজ্ঞান !
বিহারী গুলো তো ওরকমই হয়, তার উপর রিকশাওয়ালা । সে তো নেশা করবেই । চটপট উঠে ফ্রেশ হয়ে নে । রামলাল ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে । "
অর্কর কথায় এবার সত্যিই লজ্জা পেলাম । আমার মনে হয় ব্যাপারটা আর একটু ভেবে দেখা উচিত ছিল ।
রামলালের রান্নার হাত দারুণ। ও এই বাংলোর দারোয়ানের কাজ করে ।
ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম চারপাশটা ঘুরতে । আমাদের বাংলোটা বেশ বড়সড় । বাংলোর একপাশে অনেক গাছের বাগান । বাগান থেকে একটু দূরেই একটা কুয়ো ।
আর অন্যপাশে একটা খালি জায়গা পড়ে আছে । জায়গাটা ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে, ওখানকার মাটি গুলো খোঁড়া হয়েছিল কখনো । ঠিক যেন কবরস্থানের মত এবড়ো-খেবড়ো মাটিগুলো । ওই জায়গাটায় একটা গাছ তো দূর, একটা ঘাসও নেই ।
একটা সিগারেট ধরিয়ে আমরা বাংলোর পিছন দিকে গেলাম । বাংলোর পিছনটায় ঘন বাঁশের বন । বাংলো থেকে মিনিট পাঁচেক পরেই জঙ্গল । আশেপাশে কোনো দোকানপাট ও নেই । আমরা ঘুরতে ঘুরতে প্রায় মিনিট ১৫ হাঁটার পর দোকান-পাট দেখতে পেলাম । দোকানদারের সাথে টুকটাক কথা বলে প্রয়োজনীয় মশলাপাতি কিনে বেরোচ্ছি এমন সময় লোকটা জানতে চাইলো আছি কোথায় আমরা !
বাংলোর নাম বলতেই লোকটা যেন চমকে পিছিয়ে গেল । আর বললো - "সাব আপলোগ চলে যাইয়ে ! উস হাভেলি মে কুছ বুরি শক্তিয়া হ্যায় "
আমরা কিছুটা অবাক হয়েই ফিরলাম দোকান থেকে ।
রাস্তায় যেতে অর্ক বললো -" অশিক্ষার প্রসার দেখেছিস এখানে…! লোকে দিনদুপুরেও ভুত দেখে "
"আমার কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক লাগছে না" - এটা অর্ককে বলতেই ও বললো - " Please Nikhil ! Don't talk like such an Idiot... বাংলোটার জমিটা দেখেছিস...? কত দাম হবে কোনো আইডিয়া আছে তোর..? লোকে তো এসব গল্প ফাঁদবেই । এখন পা চালিয়ে চল । অনেকক্ষন বেড়িয়েছি , রামলাল লাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষা করছে হয়তো । "
অগত্যা আমিও আর কথা না বাড়িয়ে চললাম বাংলোর দিকে...।
বাংলোয় ফিরলাম যখন তখন বেলা দেড়টা প্রায় । ক্ষিদেও পেয়েছিল খুব । তাই ঠিক করলাম প্রথমে খেয়ে তারপর স্নান করে লম্বা একটা ঘুম দেব ।
খাবার টেবিলে বসে সবে অর্ধেক খাওয়া হয়েছে তখন হঠাৎই রামলাল জানালো এখন দিনসাতেক কাজ করার মতো কোনো কাজের লোক নাকি পাওয়া যাচ্ছে না । আর লোক পাওয়া গেলেও তারা কেউ রাত কাটাতে রাজি নয় এখানে । সন্ধ্যে ছটার বেশি নাকি কেউই থাকবে না এই বাড়িতে।
সবে বসেছিলাম কচি পাঁঠার ঝোল মেখে আয়েশ করে খেতে, আর এই সময়ই এসব উটকো ঝামেলার কথা । যাই হোক , খেয়ে দেয়ে উঠে কাজের লোকদের সাথে কথা বললাম । বেশ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে একটা মেয়েকে রাজি করা গেল দিন সাতেক কাজ করে দেওয়ার জন্য । রাতেও থাকতে রাজি হলো মেয়েটি ।
এদিকের সব কাজকর্ম মিটিয়ে যখন স্নানঘরে গেলাম তখন বেলা গড়িয়ে প্রায় 3টে ।
আমার ঘরের সাথেই অ্যাটাচ বাথরুম । বাংলোটা দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ার জন্যই নাকি জানি না , বাথরুমটা প্রথম ধাক্কায় খুললো না । দু-তিনবার ধাক্কা দেওয়ার পর ক্যাঁচ করে একটা শব্দ করে খুলে গেল ।
বাথরুমটা বেশ বড় আর খুব একটা পরিস্কারও নয় । তবে ব্যবহার করা যাবে ভালোভাবেই । ঘুলঘুলি দিয়ে আলো প্রায় ঢোকেনা বললেই চলে । বাথরুমের দেয়াল গুলোতেও শ্যাওলা জমে গেছে । বাথরুমের ছিটকিনিটা বন্ধ করতেই দেখি পুরো বাথরুমটা অন্ধকার হয়ে গেল । মনে মনে নিজেকে বললাম " অ্যাডভেঞ্চার করতে এসেছো আর এইটুকু তো সহ্য করতেই হবে " । শাওয়ারের কলগুলোয় প্রায় জং পরে গেছে । বাইরে রোদ ছিল বেশ ।শাওয়ারের জলটাও বেশ গরম । স্নান করতে থাকলাম ।
আমার চোখে মুখে তখন সাবানের ফেনা । হঠাৎমনে হলো আমার ঘরের দরজায় টোকা মারার শব্দ হলো । প্রথমে ভাবলাম মনের ভুল হয়তো । কিছুক্ষন পর দেখি উহু, ঠিকই শুনছি । আমার ঘরের দরজায় কেউ টোকা মারছে । পরপর তিনবার টোকা মারার শব্দ হলো ।
" কে…? কে টোকা মারছো…?
ভিতরে এসো, দরজা খোলাই আছে । "
নাহ…! তারপর বেশ কিছুক্ষণ কোনো শব্দ পেলাম না ।
" অর্ক তুই এসেছিস…? এরকম করে ভয় দেখাচ্ছিস আমাকে…? আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি না একদম" বাথরুম থেকেই বললাম চেঁচিয়ে ।
নাহ ! আর কোনো শব্দ পেলাম না । শাওয়ারটা চালিয়ে সবে মুখ ধুতে যাব, এমন সময় আবার টোকা পড়লো ।
নাহ…! এবারের টোকাটা আর দরজায় নয়, একেবারে আমার বাথরুমে পড়লো ।
ঠক ঠক ঠক…!
শব্দটা এতটাই জোরে পড়লো যে চমকে উঠলাম আমি ।
চেঁচিয়ে বললাম - "কে দরজায়….? রামলাল তুমি এসেছো….? "
উহু এবারও কোনো আওয়াজ নেই ।
এবার আমি বেশ রীতিমত রেগে গিয়েই দরজাটা খুলতে গেলাম, কিন্তু পারলাম না । মরচে পড়া ছিটকিনিটা বেশ শক্ত হয়ে আটকে গেছে । যত ছিটকিনিটা খোলার চেষ্টা করতে থাকলাম, দরজার উপর ঠকঠক আওয়াজ তত বাড়তে থাকলো । শাওয়ারের জল চলছে । গরম জল পড়ছে, হঠাৎই আমার গলার কাছে একটা বরফের মত ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া পেলাম । কেউ যেন হঠাৎআমার গলাটা বরফ দিয়ে চেপে ধরেছে । আমি প্রায় ছিটকে পড়লাম বাথরুমের মেঝেতে আর তখনই বাথরুমের ছিটকিনিটা খুলে গেল । দরজা খুলে এক ছুটে বাইরে বেরিয়ে এলাম । কিন্তু কাউকেই নজরে পড়লো না ঘরে । ঘরের বাইরে বেরোতে যাব, এমন সময় দেখি আমার ঘরের ঠিক সামনে একটা কালো বেড়াল দাঁড়িয়ে ।আমাকে দেখে বেড়াল টা কর্কশ শব্দে মেও মেও করতে করতে চলে গেল । আমি রুমে ফিরে গিয়ে ভালো করে গায়ে জল ঢেলে স্নান করে, ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম ।
তারপর বিছানায় শুয়ে ভাবতে থাকলাম - যদি ধরেও নিই আমার দরজায় টোকাটা কোন ভাবে বিড়ালে দিচ্ছিলো, তাহলে আমার গলার কাছে ওই ঠান্ডা অনুভূতিটা কিসের ছিল…!
দরজাটাই বা অতজোরে বন্ধ হলো কিভাবে ।
আর বন্ধ যদি হয়েও থাকে তবে হঠাৎ করেই খুললোই বা কিভাবে । অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরছিলো মাথায় ।
এসব সাত-পাঁচ ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানিই না । ঘুম ভাঙলো অর্কর ডাকে ।
" কিরে আর কত ঘুমাবি ? বাইরের দিকে চল । বাগানের দিকটা বেশ ভালো হাওয়া দিচ্ছে । " -- অর্ক বললো ।
অগত্যা নিচে চলে গেলাম । বাগানের ফুরফুরে হাওয়ায় বসে সিগারেট ধরিয়েছি দুজনে । অর্ককে দুপুরের ঘটনাটা সবে বলতে যাবো, অমনি শুনলাম --- "সাব চায়ে অর গরম পাকোড়া লায়ে হান । জলদি সে খা লিজিয়ে, নেহিতো ঠান্ডা হো জায়েগা । "
সিগারেট ফেলে কফিতে চুমুক দিলাম । সত্যিই রামলালের হাতের রান্নার জবাব নেই ।
তবে মনটা বেশ উশখুশ করতে লাগলো, অর্ককে দুপুরের ঘটনাটা বলতে পারলাম না ।
সন্ধ্যে হয়ে আসছিল, আমরা ঘরে ফিরলাম রামলালের ডাকে । তারপর দুজন একসাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পর রাত প্রায় ৯টার সময় রামলাল এলো আমাদের কাছে । বললো - " সাব এবার খাবার খেয়ে নিন । কখন যে আলো-আঁধারী হয়ে আসে কুছুই বলা যায় না । "
ডিনার করতে বসলাম । রাতে ছিলো চারাপোনার পাতলা ঝোল, বেগুনভাজা আর পটলের দোরমা । অসাধারণ রান্না ।
খুব তৃপ্তি করে খেয়ে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে যাব এমন সময় রামলাল বললো - " সাব একটা কথা ছিল । রাত মে জো কুছ ভি হো যায়ে , ঘর সে বাহার মত নিকাল না । ইঁহা কা রাত থোরা আলাগ সা হোতা হান "
অর্ক হেসে বললো - " অন্যরকম রাত কাটাবো বলেই তো এসেছি রামলাল । তুমি ভয় পেয়ো না অত । যাও , খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ো "
রামলাল মাথা নেড়ে চলে গেল ।
ঘরে এসে আমার অস্বস্তি যেন আরো বাড়তে লাগলো । কি বললো রামলাল...?
রাত গুলো অন্যরকম..? কি রকম...? তবে কি ও কিছু বুঝেছে...? তবে কি আমার অনুভূতি গুলোও সত্যি...?
এসবই ভাবছিলাম এলোপাথাড়ি , ঠিক তখনই রামলাল আমার ঘরে এলো গরম দুধ নিয়ে । ওকে জিগেস করলাম -- " রামলাল , তুমি হঠাৎ রাতে রুম ছেড়ে বেরোতে বারণ করলে কেন..? তুমি কি কিছু জানো…? "
রামলালের চোখ মুখে ভয় ফুটে উঠলো । জিগেস করলাম - "কী হয়েছে রামলাল…? ভয় পাচ্ছ কেন…? আর কিসেরই বা ভয় তোমার…? "
" নেহি সাহাব ! আমি কুছুই জানে না । " আধো বাংলা হিন্দীতে বলতে বলতে সে ঘাড় নেড়ে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে গেলো আমার রুম থেকে ।
রামলাল চলে যাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে দিলাম। ঘড়িতে দেখি তখন ১০টা সবে । আমার তাড়াতাড়ি ঘুমোনোর অভ্যেস নেই ! কিন্তু শিমুলতলা এর মধ্যেই নিঝুম ।
অগত্যা একটা ডিটেকটিভ বই নিয়ে পড়তে শুরু করলাম ।
কতক্ষন পড়েছি খেয়াল নেই । হঠাৎই একসময় কিসের যেন অস্বস্তি লাগতে লাগলো । কেন তা জানি না । গায়ে খুব জ্বালা জ্বালা করছে ।
শিমুলতলায় গরম বেশ । তবে এতটা অস্বস্তি হওয়ার মতও কোনোকারণ নেই । তাকিয়ে দেখলাম ঘরের সবকটা জানালা বন্ধ ।এবার বুঝলাম আমার অস্বস্তির কারণ । আমি একেবারেই বন্ধ ঘরে থাকতে পারিনা । উঠে গিয়ে জানলা গুলো খোলার চেষ্টা করলাম ।
আমার রুমে 2টো জানালা । কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, একটাও জানালা খুলতে পারলাম না ঠেলাঠেলি করে । ভাবলাম অনেকদিন খোলা হয়নি তো, তাই হয়তো মরচে ধরে শক্ত হয়ে আটকে গেছে ।
জানলা খোলা গেল না বলে বেশ বিরক্ত লাগলো । ঘরের ভিতরটাও বেশ গুমোট হয়ে এসেছে । এখন তো রামলালও ঘুমোচ্ছে , ওকে ডাকার কোনো মানে হয়না । গায়ের জামাটা খুলে ফেললাম । তাতে গরম কিছুটা কমলো । খানিকক্ষণ বাদে বইটা পড়া শেষ হয়ে গেল । আর তো কিছু করার নেই । লাইটটা নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম । কিন্তু তারপরেই ঘুম আর আসে না । বিছানায় শুয়ে যেন ছটফট করতে লাগলাম । কিসের যেন একটা অস্বস্তি । বিছানায় এদিক থেকে ওদিক গড়াচ্ছি । ঠিক এমন সময় দোতলা ওঠার সিঁড়িতে কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম । কান খাড়া করে রইলাম । উহু মোটেও ভুল না ।
পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি একটা নুপুর পড়া পায়ের আওয়াজ ।
ছম ছম ছম
এগিয়ে আসছে আমার ঘরের দিকেই যেন । প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম আমি । শিমুলতলা আসা অবধি যা যা হচ্ছে আমার সাথে সবটাই কি কাকতলীয়....!
ঠিক এমন সময় নুপুরের আওয়াজ থেমে গেল । কি করবো যখন বুঝতে পারছি না প্রায় , ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়লো ।
পরপর তিনটে - ঠক ঠক ঠক...!
ভীষণ ভয় পেলেও মনে একটা জেদ চেপে গেল , কি হচ্ছে সেটা জানার ।
" কে....? কে টোকা দেয়...? " --- মনে সাহস এনে বেশ ভারী গলায় জিগেস করলাম ।
যথারীতি উত্তর পেলাম না কোনো ।
হঠাৎমনে হলো দরজার
কাছে কোনো কাউকে সরে যেতে দেখলাম । আর ঠিক তখনই নুপুরের শব্দটা কমে গেল ।
মনে হলো যেন , যে এসেছে সে ফিরে যাচ্ছে।
এবার কিছুটা সাহস আর জেদ নিয়েই বাইরে বেরোনোর জন্য দরজা খুললাম । বাইরে বেরোতেই দেখি , সেই কালো বিড়ালটা । চোখ গুলো কি জ্বলজ্বল করছে । সিঁড়িতে তখনো নুপুরের আওয়াজ পাচ্ছি । সিঁড়ির অর্ধেকটা গেছি কি যাইনি , দেখি একটা নারীমূর্তি । নাহ মুখ দেখতে পাইনি , শুধুই ছায়ামূর্তি । হঠাৎই বিড়ালটা প্রচন্ড কর্কশ শব্দে মেও করে চেঁচিয়ে উঠলো ।
আমি ভয়ে সিঁড়ি দিয়ে প্রায় পড়ে যাবার উপক্রম । তারপর হঠাৎই আর ছায়ামূর্তিকে দেখতে পেলাম না ।
রাতে একা ঘুমোনোর সাহস পেলাম না আর । নিচের তলায় গিয়ে অর্কর ঘরে টোকা দিলাম । মনে হলো ও জেগেই আছে ।
অর্কর গলাটা বেশ ভীত লাগলো ।
" অর্ক ! আমি নিখিল ।
দরজাটা খোল । কি হয়েছে তোর...? " --- আমি ডাকতেই অর্ক দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো । ওর চোখমুখের অবস্থা দেখে মনে হলো প্রচন্ড ভয় পেয়েছে কিছুতে ।
ওকে জিগেস করলাম " কি হয়েছে .....? এত ভয় পেয়েছিস কিসে...? "
অর্ক যা বললো তাতে দেখলাম একটু আগে আমার সাথে যা কিছু ঘটনা ঘটেছে , তার সাক্ষী ও । ওর সাথেও ঠিক এমন টাই হয়েছে ।
অর্ককে একা রাখাটা ঠিক হবে না । আর আমিও বেশ ভয় পেয়েছিলাম । তাই সিদ্ধান্ত নিলাম রাতটা দুজনে একসাথেই শোব ।
ঠিক করলাম দোতলায় আমার ঘরেই রাত কাটাবো দুজনে একসাথে ।
অর্ক আমার ঘরে চলে এলো । একটু জল খেয়ে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম আমরা দুজনেই । হঠাৎই ঘরের ঝাড়বাতিটা দপদপ করতে লাগলো । হঠাৎ একসময় এক ঝটকায় গেল আলোটা নিভে । পুরো ঘর জুড়ে অন্ধকার । ঘরের ভেতর শুধু আমরা দুটি প্রাণী ।
প্রচন্ড ভয়ে, নাকি জানলা বন্ধ থাকার জন্য জানিনা , আমরা দুজনেই ভীষণ অস্বস্তি বোধ করলাম । ঘরে ভিতরের পরিবেশটা যেন আরো গুমোট হয়ে এলো । টেকা যাচ্ছে না প্রায় । আমি মোমবাতি খুঁজতে লাগলাম , অর্ক বসে ছিল বিছানার উপর । অন্ধকারে টেবিল হাতড়াতে শুরু করলাম । মোমবাতি পেলাম না , কিন্তু সকালের মতোই হাতে সেই একটা বরফ ঠান্ডা হাত ঠেকলো যেন । অন্ধকারে ঠিক ঠাওর করতে না পেরে ভয়ে বিছানায় এসেই বসলাম । আমাদের দুজনের অবস্থাই বেশ কাহিল তখন ।
হঠাৎই আমার খাটের সামনের জানলাটায় দুম দুম করে শব্দ হলো । শব্দটা এতটাই জোরে আর এমনই যে আমরা দুজনেই প্রায় লাফিয়ে উঠলাম ।
অর্ক বললো - "একি কান্ড ! বাইরে থেকে কে দোতলার জানলায় ধাক্কা দেবে...? "
আমার গলা শুকিয়ে গেল
ভয়ে বিছানা থেকেও নামতে পারলাম না আমরা । আমি এত ভয় পেয়েছি যে নিজের জন্যই অবাক হলাম কিছুটা । কিসের ভয়...? চোর-ডাকাতের... নাকি হন্টেড হাউস শুনেছি বলে ভয়টা চেপে বসেছে মনে...!
অর্ক মনে সাহস এনে বললো - " নিখিল , এত জোরে আওয়াজ হচ্ছে রামলাল নীচে শুনতে পাচ্ছে না...? কই কারো গলার আওয়াজ পাচ্ছি না তো । "
কিছুক্ষন সব চুপচাপ । তারপর ঠিক পাঁচমিনিট বাদে আবার ঐরকম দুমদুম শব্দ হলো ।
মনে হলো কেউ যেন জানালাটা খুলে ভেঙে ফেলতে চাইছে । কিন্তু জানলার ভিতর তো লোহার শিক দেয়া , জানলা তো ভিতরের দিকে খুলবে না ।
আমি কোনোমতে মনে একটু সাহস এনে বলতে গেলাম, কে…?
কিন্তু আমার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজই বেরোলো না ।
গলাটা শুকিয়ে প্রায় কাঠ হয়ে গেছে আমার । মনে হলো এক্ষুনি এক গ্লাস জল না খেলে আমি বোধহয় মরেই যাবো ।
আমার খাটের পাশের টেবিলেই জলের জাগ ছিল । সেটাকে কোনরকমে তুলে একটু জল খাবার চেষ্টা করলাম । একফোঁটা জলে গলাটা ভিজেছে, কি ভেজেনি , আবার জানলায় সেই শব্দ । আচমকা শব্দে জলের জাগটা আমার হাত থেকে পড়ে বিছানাটা গেল ভিজে । জাগটা মাটিতে গড়িয়ে ঢং ঢং করে শব্দ হলো ।
ভয়ে এবার আমাদের দুজনেরই হাত-পা অবশ হয়ে গেছে ।
অর্ক বললো - " জানলায় এত জোরে শব্দ হচ্ছে অথচ নিচতলা থেকে কারো কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছি না তো । তবে কি সবাই রাতের বেলা এই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেল ? "
অর্কর কথায় ভয় আর বেড়ে গেল আমার ।
চতুর্থবার আওয়াজ হতে আমরা আর থাকতে পারলাম না । সিদ্ধান্ত নিলাম যাই হোক দেখবো কি ঘটছে । নয়তো এরকম ভয় পেতে পেতে হয়তো দম আটকে মরেই যাব ।
আমরা খাট থেকে নেমে ছুঁটে গেলাম জানলার কাছে । একে অপরের হাত ধরে আছি । আমি এবার জানলাটায় ধাক্কা মারলাম সজোরে ।
আশ্চর্য ব্যাপার…!
এতক্ষন এত ঠেলাঠেলি করেও যে জানলা আমি খুলতে পারিনি , এবারে এক ধাক্কায় সেটা খুলে গেল ।
জানলার বাইরে কেউ নেই । জোৎসনার আলোয় যতদূর দেখা যায় কাউকেই দেখতে পেলাম না । মানুষজনের তো কোনো চিহ্নই নেই ।
অর্ককে কি একটা বলতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ একসাথে অনেক গুলো শেয়াল এর চিৎকার….!
মরাকান্না জুড়েছে যেন । আমার সারা শরীর শিউরে উঠলো ।
এবার হঠাৎই অর্ক বাইরের দিকে আঙ্গুল বাড়িয়ে কিছু একটা দেখালো ।
তাকিয়ে দেখি আমার ঘরের সামনের ছোট পাঁচিলটায় সাদা শাড়ি পরে একটা মেয়ে বসে আছে যেন । মুখটা অন্যদিকে ঘোরানো ।
আমার বুকের মধ্যে যেন দুম করে ঘা লাগলো । কে এই মেয়ে…? এখানেই কি করছে…?
মেয়েটা হঠাৎই পাঁচিল থেকে নেমে বাগানের দিকে হাঁটতে শুরু করলো ।
ব্যাপারটা জানতে আমি আর অর্ক এবার ঘর থেকে একছুটে বেরিয়ে বাইরে গেলাম । মেয়েটা আসতে আসতে কুয়োর দিকে এগোতে থাকলো।
আমরাও একটু দূরত্বে থেকে ওর পিছু নিলাম ।
মেয়েটা কুয়োর সামনে গিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল । তারপর আমাদের দিকে ফিরে দেখতেই আমাদের প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাবার জোগাড় ।
একি দেখছি.....?
এ তো আমাদের বাড়িতে যে মেয়েটা কাজ করতে ঢুকেছে সে-ই ।
সে কি বিভৎস রূপ তার । আলুথালু চুল এদিক ওদিক উড়ছে । মুখটা ফ্যাকাশে , রক্তশূন্য প্রায় । শাড়ীটাও এলোমেলো । আর চোখগুলো রক্তবর্ণ প্রায় । ঠিক যেন আগুনের গোলা । আমরা ভয়ে পাথরমূর্তি হয়ে গেলাম প্রায় ।
মেয়েটা আমাদের দিকেও তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন । তারপর একটা ভীষণ অট্টহাসি হেসে আমাদের প্রায় অবাক করে দিয়ে কুয়োর উপরে উঠলো , তারপর চোখের নিমেষে কুয়োর ভিতর মিলিয়ে গেল যেন...!
তারপর কি হবে না হবে চিন্তা না করে আমরা দৌড় দিলাম । একদৌড়ে ঘরে এসে দুজনে বিছানায় বসলাম । ততক্ষনে কারেন্ট এসে গেছে । আমরা দুজনেই বিছানায় বসে ঠকঠক করে কাঁপছি আর ভগবানের নাম জপতে জপতে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছি ।
ঘন্টা তিন-চার পরে , সকালের আলো ফুটতেই রামলাল এলো । অর্ককে ঘরে দেখতে না পেয়ে আমার ঘরে এসে দেখে আমরা দুজনে একই ঘরে । অবাক হলো কিনা জানিনা , তবে চমকে গেছিলো আমাদের একসাথে দেখে ।
আমরা সকালের ব্রেকফাস্ট করতে করতে কাল রাতের সব ঘটনা রামলাল কে বললাম ।
অর্ক বললো - " তুমি তো আগে থেকেই সব জানতে । তাই হয়তো সাবধান করেছিলে আমাদের । তাহলে সত্যিটা বলোনি কেন...? "
রামলাল কোনো উত্তর করলো না । চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো একপাশে । এবার আমরা বেশ রেগে গেলাম ।
প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও পরে ওকে চেপে ধরতেই রামলাল সব সত্যি বললো আমাদের । রামলাল যা বললো তা কিছুটা এরকম - "এই বাড়িতে বহুকাল আগে , (প্রায় 10 বছর তো হবেই) যখন লোকজন ছিল , তখন থেকেই রামলাল আর ওই মেয়েটি এই বাড়িতে কাজ করতো । মেয়েটার নাম রেশমি ।
অসম্ভব সুন্দরী যুবতী রেশমী বাড়ির কাজের পাশাপাশি নাচেও বেশ পারদর্শী ছিল ।
বাংলোটা যাদের , তাঁরা কলকাতা চলে যায় হঠাৎই । বাংলো ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে রেশমী কে আর রামলালকে দায়িত্ব দিয়ে যান বাংলো দেখাশোনার । বুড়ো রামলাল আর রেশমী বাবা- মেয়ের মতো থাকতো । তাদের দিনগুলো কাটতো বেশ সুখেই । তারপর হঠাৎই একদিন আমাদের মতোই একজন এলো বাংলো ঘুরতে । রামলাল সেদিন বাড়ি ছিলো না ,শহরের কাজে বাইরে গেছিলো ।
আর ঠিক সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ছেলেটি রেশমির সাথে অভদ্র আচরণ শুরু করে । তারপর একসময় ছিড়ে - খুবলে খায় রেশমির শরীরটাকে । সবশেষে রেপ করে ফেলে রেখে দেয় । নিজের সম্মান খুইয়ে রেশমী সেই রাতেই কুয়োর জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে । এই ঘটনার পর থেকে রামলাল আর এই বাড়ি ছেড়ে যেতে পারেনি । রেশমির আত্মার সাথেই রয়ে গেছে বাড়িতে । শুধু তাই নয় , ওই ঘটনার পর থেকে কোনো অল্পবয়স্ক ছেলে এই বাংলোয় এলেই রেশমির অতৃপ্ত আত্মা তাকে হত্যার চেষ্টা করে । "
এসব কিছু শোনার পর মনটা ভীষণ ভারী হয়ে গেল । মনের কোথাও যেন রেশমির জন্য দুঃখ হতে লাগলো ।
তবে অর্ক আমাকে ফিসফিসিয়ে বললো - "অনেক শিক্ষা হয়েছে ভাই । ভুতের সাথে বাস আর নয় " ।
আমারও আর রাত কাটানোর ইচ্ছে ছিল না । তাই রামলালকে বলে সেদিনই আমরা কলকাতা ফিরে যাবার তৈরি হলাম । বেলা প্রায় 11.30টার সময় নিজেদের জিনিস গুছিয়ে রওনা দিলাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে ।
যাওয়ার আগে শুধু বাগান থেকে একটা গোলাপ তুলে ওই কুয়োর উপর রেখে এলাম । কি চাইলাম জানি না , শুধু হয়তো মনে মনে রেশমীর আত্মার শান্তি চাইলাম ।
স্টেশনে এসে অর্ক বললো - " কিরে তোর শরীর ঠিক হলো ? হাওয়াবদলটা কেমন হলো...? "
আমি কিছুই বললাম না । আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম একটা ।
||সমাপ্ত||
(রাতের অন্ধকারে তোলা ছবি)