স্বাধীনতা : “এক সুন্দর সোনালী স্বপ্ন”
-- দেবদ্যুতি ব্যানার্জী
১৯২৮, কোলকাতার অধিবেশনে যোগ দিতে আসছেন পন্ডিত মতিলাল নেহরু, কংগ্রেসের সভাপতি। কোলকাতায় তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর রাজকীয় আয়োজন চলছে। তৎকালীন বাংলায় (অবিভক্ত) স্বাধীনতাকামী সংস্থাগুলির চিন্তাধারা বা কর্মপদ্ধতি আলাদা হলেও লক্ষ্য ছিল এক, দেশের মুক্তি। তাই বাঙালীদের আবেগকে কাজে লাগাতে কংগ্রেস এক ছাতার তলায় টেনে নিল সবাইকে, ঐ একই লক্ষ্যে যাওয়ার নামে। এই সব সংস্থা থেকে ২০০০ স্বেচ্ছাসেবক এবং ৫০০ মহিলা স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে মেজর সত্য গুপ্তের পরিচালনা এবং সুভাষচন্দ্র বসুর সর্বাধিনায়কত্বে গড়ে উঠল ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ বা বি.ভি.। কিন্তু গান্ধীজি এই সামরিক নিয়মশৃঙ্খল দলের কার্যকলাপে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না, কারণ তিনি তো অহিংস পথে বিশ্বাসী! আর এই তরুণ যুবকদল...... এরা তো এই নীতির বিপরীতপন্থী। কংগ্রেসের শান্তিপূর্ণ যুব সংগঠন হয়ে শোভাবর্ধনের পক্ষপাতী তারা একেবারেই নয়।
কোলকাতায় বি.ভি.র এই সামরিক সংগঠন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের গ্রামে ফিরে গেলেন এক তরুণ শিক্ষক। অঙ্ক কষা তুখোড় মাথায় তিনি স্পষ্ট বুঝেছিলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য ঠিক এরকমই একদল তরুণ তুর্কি প্রয়োজন, যারা মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়েও ভেঙে পড়বে না। গ্রামের সকলের অতি প্রিয়, সবার অত্যন্ত আপন সেই শিক্ষক তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ সহযোগী গণেশ ঘোষ, অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত সিংহ, লোকনাথ বল, নির্মল সেনদের নিয়ে গড়ে তুললেন ভলান্টিয়ার বাহিনী। ১৯২৯ সালে সুভাষচন্দ্র এলেন সেখানে, জেলা কংগ্রেস অধিবেশনে। অধিবেশন শেষে স্থানীয় মহালক্ষ্মী ব্যাঙ্কের বন্ধ দরজার আড়ালে চলল আরেক গোপন অধিবেশন..... গণেশ ঘোষ, ত্রিপুরা সেন ও অনন্ত সিংহের সাথে সুভাষচন্দ্র। এরই মধ্যে বাংলায় কংগ্রেসের নেতৃত্বে কে থাকবেন, সেই নিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু ও যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জেরে নানা জায়গায় বিরোধ, সংঘর্ষ, সংঘর্ষের আঁচ পড়ল সেই উপকূল অঞ্চলের গ্রামেও, প্রাণ হারাল দশম শ্রেণীর ছাত্র সুখেন্দু দত্ত। প্রতিবাদে গর্জে উঠল সেখানকার যুবসমাজ, প্রতিশোধ চাই! কিন্তু সেই শিক্ষক বললেন, না, এখন নয়। জবাব আমরা দেব, সঠিক জায়গায়, সঠিক সময়ে।
গোপনে চলল প্রস্তুতি, গ্রামের কিশোররাও এসে যোগ দিল দলে। গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, লোকনাথ বলেদের তত্ত্বাবধানে শরীরচর্চা, নিয়ম শৃঙ্খলা, অস্ত্র চালানো সবরকম শিক্ষাই চলছিল সেই বাহিনীর। এদিকে মেয়েরাও পিছিয়ে ছিল না। তারা কোলকাতার হস্টেলে পড়াশোনার ফাঁকে বানাচ্ছিল বোমা, ছুটিতে বাড়ি এসে তা দিয়ে যেত এই বিপ্লবীদের। আর সবার মাথার ওপরে রয়েছেন দুই দাদা, দুই সেন...... সূর্য ও নির্মল, দুই ছায়াসঙ্গী। প্রতিনিয়ত হিসেব কষে পরিকল্পনা, ব্লু প্রিন্ট তৈরি হচ্ছে, তা ঝালিয়ে নেওয়া হচ্ছে, দায়িত্ব ভাগ করা চলছে....... মেপে ফেলতে হচ্ছে প্রতিটি পা, এতটুকু ভুল হলে সব শেষ!
১৯৩০, ১৮ এপ্রিল..... রাত নেমেছে ভালোই। অম্বিকা চক্রবর্তী একদল ছেলে নিয়ে আগেই বেরিয়ে গেছেন টেলিগ্রাফ লাইন, টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করতে। এর দুদিন আগে কয়েকজন বিপ্লবী শহর থেকে চল্লিশ মাইল দূরে গিয়ে একজায়গায় মালগাড়ি লাইনচ্যুত করে, এক জায়গায় টেলিগ্রাফের তার কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে এসেছেন। চট্টগ্রাম তখন হয়ে গেছে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপের মতন। রাত দশটা নাগাদ, ইংরেজ ছদ্মবেশে এগিয়ে গেলেন অনন্ত সিংহ আর গণেশ ঘোষ। গন্তব্য পুলিশ লাইন অস্ত্রাগার। বৈপ্লবিক অভ্যুথ্থানের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে দখল নিতে হবে গোটা শহরের। প্রথমে ঢোকার মুখেই বিস্মিত প্রহরীকে আর কোনো সুযোগ দিলেন না দুই জেনারেল, দুটো রিভলবার গর্জে উঠল, আর তার সাথে প্রতিধ্বনিত হল “ইনকিলাব জিন্দাবাদ! বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক!” সবার প্রিয় শিক্ষক, মাস্টারদার নেতৃত্বে বাকি ছোট দলগুলো এসে মিলল অস্ত্রাগারে। একদলকে পাহারায় রেখে বাকিরা দৌড়ে গেলেন ম্যাগাজিন কক্ষে, তালা ভাঙতেই উল্লাস — শত শত মাস্কেট্রি রাইফেল, অগণিত রিভলবার আর কার্তুজ!! অক্সিলিয়ারি ফের্সি আর্মারীতেও একই চিত্র — লোকনাথ বল ও নির্মল সেনের নেতৃত্বে তরুণদল সেখানে অস্ত্র লুঠ করল, তবে এখানে বিপক্ষীয় ছজনকে হত্যা করতে হল। ভিতরে ঢুকে শত শত রাইফেল, রিভলবার....... কিন্তু কার্তুজ নেই। তন্নতন্ন করে খোঁজ চলছে, এর মধ্যে আবার দুই শ্বেতাঙ্গ এসে হাজির। গুলিতে তাদের জবাব দিয়ে, যথাসম্ভব অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে নিয়ে রওনা দেওয়া হল পুলিশ লাইনের দিকে....... তার আগে পড়ে থাকা অস্ত্রশস্ত্র সহ অস্ত্রাগারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল। এবার পুলিশ লাইন। গোটা দলের সব খন্ড এসে জড়ো হয়েছে সেখানে। নিজেদের জাতীয় পতাকা তুলে অস্থায়ী সরকার গঠন হল সেই রাতে, সর্বাধিনায়ক হিসেবে মাস্টারদা কে দেওয়া হল ‘গার্ড অব অনার’।
গোটা ভারতে সর্বপ্রথম স্বাধীন হল চট্টগ্রাম। কিন্তু এই আনন্দের মধ্যেই হঠাৎ রাতের অন্ধকারে ভেসে এল গুলির শব্দ। শত্রুপক্ষ টের পেয়ে গেছে! সঙ্গে সঙ্গে এদিক থেকে গর্জে উঠল মাস্কেট্রি রাইফেল, কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শান্ত। কিন্তু একবার যখন ইংরেজ লুইস গান নিয়ে তৎপর হয়ে গেছে, আবার আক্রমণ করা অসম্ভব নয়। তাই পেট্রোল ঢেলে পুলিশ লাইন পুড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। এই করতে গিয়ে হিমাংশু সেন খেয়াল করেননি, পেট্রোল ছড়াতে গিয়ে তাঁর নিজের গায়েও কিছুটা পড়ে গেছে, আগুন দিতেই তা তাঁর শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে একমুহূর্তে। সঙ্গে সঙ্গে গণেশ ঘোষ আর অনন্ত সিংহ তাঁকে নিয়ে ছুটলেন কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে, সঙ্গে আনন্দ গুপ্ত ও জীবন ঘোষাল। বাকিরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন দেখলেন এঁরা ফিরলেন না, বেশিক্ষণ থাকা নিরাপদ নয় ভেবে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলেন সুলুকবহর পাহাড়ে। সেখানেই কাটল পরের দিন, তারপর আবার সারাদিন হেঁটে ফতেয়াবাদ। খাওয়া-ঘুম নেই, শুধু পথচলা...... মনে শহর মুক্ত করার সঙ্কল্প। মাস্টারদা সেই উৎসাহ দেখে সকলকে নিয়ে আবার চলার অভিমুখ বদলালেন, ভোর হওয়ার আগে শহরের সীমানায় পৌঁছাতে হবে। কিন্তু শহরে পৌঁছানোর আগেই আলো ফুটে গেল, সামনে জালালাবাদ পাহাড় দেখে সেখানেই উঠে গেলেন সকলে।
২২ এপ্রিল, বিকেলবেলা, পাহাড়েই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন সকলে, চলছে পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা। এমন সময় হঠাৎই প্রহরায় থাকা প্রভাস বলের চোখে পড়ল, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চলে যাওয়া রেললাইনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ল একটা ট্রেন, নামছে অসংখ্য মিলিটারি! মাস্টারদা বুঝলেন সংগ্রাম আসন্ন, লোকনাথ বলকে ডেকে তাঁকে এই লড়াইয়ের সর্বাধিনায়ক পদে অভিষিক্ত করলেন। এমনকি মাস্টারদা নিজেও আজ লোকনাথের আদেশ মেনে নিতে বাধ্য। বিপক্ষীয় সৈন্যদল তখন সামনের ধানক্ষেতের মাঝখানে, গুলি ছুটল এই পক্ষ থেকে..... বিপক্ষের সেনারা অনেকে আহত হল, অনেকে গড়িয়ে পড়ে গেল পাহাড়ের গা বেয়ে। বেগতিক বুঝে দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব কোণের উঁচু পাহাড় থেকে ভাইকার মেশিনগান চালাল ইংরেজ সৈন্য। কিন্তু হঠাৎ সমস্যা দেখা দিল বিপ্লবী দলের সামনে, ক্রমাগত গুলি চালানোর ফলে রাইফেলের ব্যারেল গরম হয়ে যাচ্ছে, এমনকি রুমাল দিয়েও ধরে থাকা যাচ্ছে না। তাছাড়া কার্তুজগুলোও ঠিক করে চেম্বারে ঢোকানো যাচ্ছে না। সমাধানের দায়িত্ব নিলেন সকলের পরম ভরসা, পরম আশ্রয়ের জায়গা, মাস্টারদা আর আপনভোলা নির্মল সেন। মাথা তোলার উপায় নেই বলে হামাগুড়ি দিয়ে প্রত্যেক ফ্রন্টে গিয়ে প্রত্যেকের রাইফেলের ব্যারেল লুব্রিকেটিং অয়েল দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে লাগলেন নিজের হাতে। এর মধ্যেই জেনারেল লোকনাথ বলের ছোট ভাই, ১৪ বছরের দুরন্ত কিশোর টেগরা বল, একঝাঁক গুলির আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন। একে একে এগারোজন কিশোর প্রাণ হারালেন। শেষ পর্যন্ত বিপ্লবীদের রক্তমাখা মাস্কেট্রি রাইফেল হারিয়ে দিল ইংরেজদের মেশিনগানকে। রাতের অন্ধকারেই এগারো জন সহযোদ্ধার মৃতদেহকে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে রওনা দিল অবশিষ্ট বাহিনী। চড়াই উতরাই পেরিয়ে দুর্গম পথে যাত্রা, সবার পিছনে মাস্টারদা ও নির্মল সেন হাত ধরাধরি করে চলছেন। নির্মল সেন চিরকাল সকলের অগোচরে সকলের মনের মতো কাজ করে এসেছেন, এদিনও শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত মাস্টারদার রোগা শরীরের ভার নিজের ওপর নিয়ে চললেন তিনি।
এরপর বেশ কয়েকবছর অজ্ঞাতবাস। কখনও কোয়েপাড়ায়, কখনও কানুনগো পাড়ায়, কখনও ধলঘাটে। এরই মধ্যে কোলকাতা থেকে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার গিয়ে যোগ দিয়েছেন মাস্টারদার কাছে। ১৯৩২ সাল, ১৩ জুন....... মাস্টারদা, প্রীতিলতা, নির্মল সেন, অপূর্ব সেন ধলঘাটে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে লুকিয়ে। ক্যাপ্টেন ক্যামেরন আক্রমণ করলেন সেখানে। গুলিবর্ষণে প্রথমে প্রাণ হারালেন ক্যামেরন নিজে....... তারপর এ পক্ষের নির্মল সেন আর অপূর্ব সেন। ধলঘাট সংঘর্ষের সেই বর্ণনা প্রীতিলতার ডায়রির পাতায় জীবন্ত। মাস্টারদা প্রীতিলতাকে নিয়ে সরে গেলেন নিরাপদ আশ্রয়ে, জ্যৈষ্ঠপুরাতে। মাস্টারদার ডান হাত, নির্মল সেনের মৃত্যুতে সেদিন প্রথমবার মাস্টারদাকে কাঁদতে দেখেছিলেন চারুবিকাশ দত্ত, তাঁর ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন’ গ্রন্থে একথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
এর তিনমাস পর, সেপ্টেম্বরে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ। মাস্টারদার আশীর্বাদ নিয়ে সামরিক পোষাকে সজ্জিত প্রীতিলতা রাতের অন্ধকারে জনাকয়েক তরুণকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ইউরোপিয়ান ক্লাবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ। এদিকে আর্মড মিলিটারি ছুটে আসছে। দলের প্রত্যেককে নিরাপদে ঐ জায়গা থেকে বের করে দিলেও প্রীতিলতা নিজে পারলেন না, বাধ্য হয়ে পকেটে থাকা পটাশিয়াম সায়ানাইডের মোড়ক তুলে নিতে হল। পরদিন সংবাদপত্রে বেরোল তাঁর আত্মবলিদানের কথা। পরাধীন ভারতের প্রথম মহিলা শহিদ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। মৃত্যুর আগের দিন তাঁর মাকে লেখা চিঠিতে তিনি মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে গেছেন।
একের পর এক বিপ্লবী ধরা পড়ছেন, মারা যাচ্ছেন, কিন্তু মাস্টারদার সন্ধান নেই। ইংরেজ পুলিশ তাঁর মাথার দাম ধার্য করেছে দশ হাজার টাকা। মাস্টারদা তখন গৈরালা গ্রামে, সাথে কল্পনা দত্ত, সুশীল দাশগুপ্ত প্রমুখ। অতি সাবধানতা সত্ত্বেও, মাস্টারদার অনুগামী ব্রজেন সেনের দাদা নেত্র সেন কী করে যেন জেনে গেলেন মাস্টারদার উপস্থিতি। তিনিই খবর দিয়ে পুলিশকে ডেকে আনলেন। কল্পনা দত্ত, সুশীল দাশগুপ্ত পালিয়ে যেতে পারলেও মাস্টারদা ধরা পড়লেন সেদিন — ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩।
বিচার নামক একটা প্রহসন হয়েছিল ঠিকই, আর তাতে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলার প্রধান ফেরারী আসামী সূর্যকুমার সেনের ফাঁসির আদেশই ধার্য হয়েছিল। এরই মধ্যে মাস্টারদাকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছিলেন তারকেশ্বর দস্তিদার, কল্পনা দত্ত সহ আরো অনেকে। অবশেষে, ১৯৩৪ সালের ১১ জানুয়ারি, মাস্টারদা কনডেমড সেল থেকে ওয়ার্ডারকে দিয়ে গোপনে পাঠালেন তাঁর শেষ বক্তব্য, দু পাতায় লেখা, যার সারমর্ম — “আমি তোমাদের জন্য কী রেখে গেলাম?...... এক সুন্দর সোনালী স্বপ্ন, এক শুভ মুহূর্তে আমি এই স্বপ্ন প্রথম দেখেছিলাম।” পরদিন ভোরে, মাস্টারদা আর তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি হয়, শেষ মুহূর্তেও তাঁদের কন্ঠে ছিল কেবল মাতৃমন্ত্র — “বন্দে মাতরম”। মাস্টারদার স্মৃতিকেও মুছে ফেলতে ইংরেজ সরকার ফাঁসির পর তাঁর বস্তাবন্দি মৃতদেহ বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেয়।
ল্যাংস্টন হিউজ বলেছিলেন, “স্বাধীনতা কোনোদিন আসবে না। আজ না। কোনোদিন না।” সত্যিই মানুষের স্বাধীনতা কোনোদিন আসে না। মাস্টারদা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন হয়তো আমাদের মাথায় আরও অনেকগুলো স্বপ্নের গেরিলা দ্রোহ শুরু করে, যেটা আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে যায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আজও যাঁরা স্বপ্ন দেখেন তাঁদের অমলকান্তি হয়ে হয়তো গান শুনতে হয়, “দিনবদল করতে গিয়ে শহীদ হলো শেষে!” এরকম শহীদের নাম হোক প্রদ্যোত, ভবানী, দীনেশ, প্রীতি কিংবা সূর্য!