ক্লান্ত অঝোর ধারাপাতে ব্যাস্ত ক্ষুধার্থ শহরের বুকে নেমে আসছে একঘেয়ে ঝমঝম শব্দের বারিধারা। ক্ষুধার্থ এক শালিক একভাবে ডাকতে ডাকতে উড়ে যাচ্ছে শহরের এক ফ্লাই ওভারের উপর দিয়ে। তার অলস দৃষ্টি চলে যাচ্ছে ফ্লাই ওভার এর উপর দিয়ে যাওয়া একের পর এক গাড়ির দিকে। যেন ঘ্যানর ঘ্যান ছন্দে তারা বয়ে চলেছে জীবনের শেষের পথে , যেন এটা চলছে অনন্তকাল ধরে। হঠাৎ লালবাতির প্রবল আপত্তিতে যানগুলোকে স্তব্ধ করে পরস্পরের দিকে হেটে আসছে বর্ষাতি পরা দুটি মানুষ। তাদের দুচোখ ভরা আবেগ বৃষ্টির জলকনায় মিশে রচনা করছে বহির বিশ্বের এক অনুভূতির বৃত্ত। হয়তো এবার আর তাদের কোনো পিছুটান নেই। এখন থেকে তারা মুক্ত। হয়তো তাই চোখে ফুটে উঠছে স্বাধীনতার উল্লাস। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে একসাথে একে অপরকে প্ৰশ্ন করলো "তুই?এখানে!"
১
রক্তিমকে এতো বছর পর এভাবে দেখে পুরোনো অস্বস্তিটা যেন আবার অনুভব করলো শ্রী। তবুও সে রক্তিমের দিকে এগিয়ে গেল। তাকে দেখে রক্তিম বললো, "তা মিস ভয়ঙ্করী এতো বছর পর এখানে? যা বৃষ্টি পড়ছে! সময় থাকলে চল সামনেই একটা কফি শপ আছে। বসে কিছুক্ষন গল্প করা যাবে। "
"হুম !তুই শালা একটুও পাল্টালি না। অনেক দিন পর দেখা হলো বলে। আসলে একবার গ্যাঁজাতে শুরু করলে তো আর থামিস না " , বলে শ্রী হেসে উঠলো।
কিছুটা দূরের ক্যাফেটাতে পৌঁছে ,তারা দেখল ক্যাফেটা পুরো ফাঁকা। ওরা জানলার পাশের একটা টেবিলে এসে বসল। বাইরে বৃষ্টি মাখা কলকাতা শহর যেন আজ অঝোরে কেঁদে চলেছে। সে যেন এখন সম্পর্কের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া এক পাগল ব্যর্থ প্রেমিক , যে আঘাত খেতে খেতে আবার নিজেকে প্রস্তুত করছে নতুন করে বেঁচে ওঠার জন্য। মেনুকার্ডটা হাতে নিয়ে রক্তিম বললো ,"কি খাওয়া যায় বল তো?"
উত্তরে শ্রী বললো,"ক্যাপুচিনো"
শ্রী আড়চোখে একবার রক্তিম কে দেখলো। সেই রক্তিম !যাকে একদিন না দেখলে তার মনে হতো পুরো পৃথিবীটা আজ ফাঁকা। তবু এই পনেরোটা বছর দেখতে দেখতে কেটে গেল।
"তা তুই এখানে?",রক্তিম বললো।
শ্রী হঠাৎ চমকে উঠল। রাস্তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল ,"ওই নতুন শপিং মলটায় গিয়েছিলাম। তুই তো.... লাস্ট শুনেছিলাম মেলবোর্ন-এ ছিলিস। "
" ছিলাম কিন্তু দেশে চলে এলাম। ওই ফ্লাইওভারটা আমাদের কোম্পানি বানিয়েছে। আমাকে পাঠিয়েছে ওটার ভারবহন ক্ষমতা মাপতে। তা আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে? "
"ভালো। "
হঠাৎ জোরে শব্দ করে রক্তিমের মোবাইলটা বেজে উঠল। রক্তিম ওর কাছে এক মিনিট চেয়ে কলটা রিসিভ করলো।
শ্রী ধোয়া ওঠা কাপুচিনোটা হাতে নিয়ে রক্তিমের চোখের দিকে তাকালো। হঠাৎই তার গা যেন শিউরে উঠল।ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়া সেই প্রশ্নচিহ্ন টা যেন সে আবার দেখতে পেল চোখের সামনে। আশেপাশের লোকজনের কথাবার্তা , বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ অথবা রাস্তায় যান চলাচলের অবাধ ছন্দ সবকিছু অতিক্রম করে সে যেন এক গভীর প্রশান্তি অনুভব করলো। তার মনে হতে লাগলো যেন এভাবেই সময় চিরকাল থমকে থাকে,যেন প্রতিমুহূর্তে কবিরা পায় তার এক একটা অনন্য কবিতার খোঁজ,সব নদী খুঁজতে যায় তার উৎস। তার অতীত তাকে নিয়ে পৌঁছল এরকমই একটা আকাশের মুখভার করা দিনে; তার স্বপ্নের কালিম্পঙে।
দিনটা এখনো তার মনে আছে। সেদিন আকাশ যেন তার প্রবল বাঁধ ভেঙে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে নেমে আসছিল সেই মেঘেঢাকা নীরব পাহাড়ের বুকে।স্কুল ফেরতা ষোলো বছরের শ্রী বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সেদিন আশ্রয় নিয়েছিল এক নিশ্চুপ বাসস্টান্ডে । বাসের অপেক্ষা করতে করতে কেটে গিয়েছিল আধ ঘন্টা। তখনই রাস্তার দিকে তাকিয়ে তার নজর আটকে গিয়েছিল হলুদ ছাতা নিয়ে তার দিকে আসা তার নতুন ক্লাসমেট রক্তিম-এর দিকে।সেদিন ওভাবে রক্তিমকে দেখে একমুহূর্তে তার যেন মনে হয়েছিল এই বিকেলেরই অপেক্ষা করেছিল সে এত কাল ধরে।এক মুহূর্তে থমকে গিয়েছিল চারপাশ , সে উপলব্ধি করেছিল এক আশ্চর্য নীরবতা গ্রাস করে নিচ্ছিল তার হৃদয়ের একটা বড়ো অংশকে। সব গল্প হঠাৎই যেন থমকে গিয়েছিল তার পাশ থেকে ভেসে আসা কিছু শব্দে ,"কিরে এখানে একা একা বসে আছিস? বাস আসেনি এখনো?"
নিজেকে সামলে শ্রী উত্তর দিয়েছিলো ,"না রে...দেখ না কতক্ষন বসে আছি। বাসের কোনো পাত্তা নেই। আর ছাতা আনতেও ভুলে গিয়েছি। এখন ..."
"তোর বাড়ি কালিম্পঙ বাজারের কাছে না ?"
"হ্যাঁ "
"ও তাহলে আমার সাথে আসতে পারিস .. আমার বাড়ির পথেই পরে "
সেদিন সারা কালিম্পঙ শহরে খুব বৃষ্টি হয়েছিল। গাছেরা প্রাণ পেয়ে জানিয়েছিল সবুজের আহ্বান। জল পেয়ে পাখিরা ফিরে পেয়েছিল নতুন করে বেঁচে থাকার আশা। আর ...আর তার সাথে শ্রী এর মনেও হয়েছিল অনুভূতির বৃষ্টি...জানালা মুখ বার করে সে পেয়েছিল নিজের স্বপ্নের জিয়নকাঠি। দূর পাহাড়ের কোলে কে যেন ছন্দ বেঁধেছিলো ,
আজ খুব মেঘ করুক ,
বৃষ্টি নামুক ঝরে ,
ছাতা সরিয়ে আবার দুজন -
ভিজবো নতুন করে।
হৃদয় জুড়ে রোদ্দুর আর
অনুভূতির খেলা ,
গল্প বলে রামধনু এক -
নিয়ে হাজার রঙের মেলা।
জোনাকিরা আজ বাঁধ ভেঙেছে ,
দূর পাহাড়ের কোলে-
একেই তাহলে ,
ভালোবাসা বলে?
কান থেকে ফোন টা নামিয়ে রক্তিম এবার শ্রীর দিকে তাকালো। চোখ বন্ধ করে চুপ করে বসে আছে। এমন ভাবে শ্রীকে দেখতে সত্যি খুব সুন্দর লাগে। কয়েকটা এলোমেলো চুল নেমে আসছে তার কপাল জুড়ে , রিমলেস চশমা , হলুদ কুর্তিতে আজ সে সত্যি যেন এক স্বর্গের অপ্সরা । রক্তিমের মনে হতে লাগলো তার শরীর টা যেন আবার অবস হয়ে যাচ্ছে , যেমন গিয়েছিল স্কুল ফেরতা পথে যখন এক ছাতার তলায় নিয়েছিল আশ্রয় তারা দুজন ,সারা শহর কাঁপিয়ে বাজ পড়েছিল দূরের ইউক্যালিপটাস গাছটায়। ভীত সন্ত্রস্ত শ্রী শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল রক্তিমকে,তার মনে হয়েছিল এই মুহূর্ত যেন না ফুরোয় , যেন অন্যন্তকাল ধরে এই একলা নীরব পাহাড়ে এমন করেই বৃষ্টি নামে,এমন সুন্দর গন্ধেই যেন চিরকাল নিজেকে নতুন করে খুঁজে পায় কালিম্পঙ শহর।
বাড়ি ফিরে সেদিন সে তাকিয়ে ছিল অন্ধকারে দূর পাহাড়ের কোলে জোনাকির মতো জ্বলা বাড়ি গুলোর দিকে।হয়তো এর একটাতেই রয়েছে তাকে জড়িয়ে ধরা মেয়েটা। যে এই পৃথিবীর বুকে এসেছে বলে সব মিথ্যে হয়ে গেছে সত্যি ,সব মনখারাপের বিকেলে এসেছে অনুভূতির জোয়ার। যেন তাকে দেখার জন্যই আকাশে ফিরে এসেছে চাঁদ।
জ্যোৎস্নার আলোয় ভেসে যাচ্ছে মোহময়ী পাহাড়গুলো। দুই পাহাড়ের মধ্যে বিস্তীর্ণ ঘাসজমির মতো ছড়িয়ে আছে অতল গভীর খাদ। খাদের দুপাশের দুই পাহাড়ের দুই বাড়িতে আজ এসেছে আলোর জোয়ার। ভালোবাসার গভীর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে পাহাড় জুড়ে। দুপাশের দুই মন নিজের অজান্তেই খাদ পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে একে অপরের কাছে। আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে আলোর ঝর্ণা। তৈরী হচ্ছে এক স্বপ্নরাজ্য।
২
আজ অনেক দিন পর লোডশেডিং দেখল শহর কলকাতা। পরন্ত সন্ধ্যায় বহুকাল ধরে আলো দিয়ে আসা নিয়ন গুলো আজ নিস্তেজ নিস্তরঙ্গ। হেয়ার পিনটা মাথায় গুঁজে শ্রী জিজ্ঞাসা করলো ," অনেক দিন পর তোকে দেখে আজ খুব ভালো লাগলো। মনে আছে সেই স্কুলের দিনগুলো?
হাজার হোক এককালে আমরা বেস্টফ্রেন্ড ছিলাম , তারপর তুই ও পড়তে চলে গেলি আর আমি পরে রইলাম কালিম্পঙ এ। "
রক্তিম শ্রীর কথাগুলো যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলো। ‘বেস্টফ্রেন্ড’- এই একটা শব্দের জন্য কত কথা জমা পরে রয়েছে ; কিছু হারাবার ভয়ে স্রোতহীন নদীতে আজও জোয়ার আসেনি। না বলা কথাগুলো জমতে জমতে এক দিকবিদিকহীন পাহাড়ের উপর এসে দাঁড়িয়েছে একলা একটি মানুষ… যেখান থেকে ফেরার পথ নেই।
"হুম! বেস্টফ্রেন্ড "
"কি হলো ?"
"না। আমাদের কলকাতার বাড়ির সেই ডাকবাক্সটা আজও পরে আছে উনিশটা চিঠির উত্তরের অপেক্ষায়। "
কথাটা শুনে চমকে উঠলো শ্রী। হ্যাঁ......রক্তিম চিঠি লিখেছিল.....হ্যাঁ সেই চিঠি……. যেগুলোকে আজও সে লুকিয়ে রেখেছে পৃথিবীকে না জানিয়ে । যখন কেউ বাড়ি থাকে না ,নিস্তেজ সূর্যটা আস্তে আস্তে ঢোলে যেতে থাকে পৃথিবীর বুক থেকে কিংবা যখন একাকী চাঁদ মেঘেদের সাথে লুকোচুরি খেলে,একলা শ্রী তখন সেই চিঠি গুলো মন দিয়ে পড়ে । তখন হঠাৎ করে মনের মধ্যে অনুভূতির জোয়ার আসে। এক আশ্চর্য ভালোলাগা আচ্ছন্ন করে ফেলে তার সারা শরীরকে। অ্যালবাম খুলে দেখতে ইচ্ছে করে স্কুল ফেয়ারওয়েল -এর দিনে রক্তিমের পাশে দাঁড়িয়ে তোলা ছবিটা। সে এক মনে তাকিয়ে থাকে হাসতে থাকা রক্তিমের দিকে। ফ্রেমে দূরে দেখা যায় বসন্তের বিকেলের পাতাঝরা গাছটাকে । তখনও কি তারা জানতো আর মাত্র পাঁচ দিন পর থেকে তাদের আর দেখা হবে না। দূর থেকে আসা কিছু চিঠি শুধু সাক্ষী হয়ে থেকে যাবে সব বিরহের বিকেলের।
" কি হলো ?চুপ করে গেলি যে?"
"না। ..আসলে তোর উপর আমার খুব রাগ হয়েছিল"
"কেন?"
"ওই যে বললাম হাজার হোক আমরা তো বেস্টি ছিলাম ,তাই ওইভাবে হঠাৎ যাওয়ার আগের দিন যখন বললি আর তোরা কালিম্পঙ-এ থাকবি না ,সত্যি খুব অভিমান হয়েছিল "
"হুঁ!অভিমান। এই অভিমান জিনিস টা জানিস খুব বাজে। .........ক্ষনিকের অভিমান হবে বলে কত কথা আজ বলা হয়ে ওঠেনি। ....দুটো মানুষকে ঠেলে দিয়েছে পৃথিবীর দুই প্রান্তে। "
চমকে উঠে শ্রী জিজ্ঞাসা করলো ,"কি কথা?"
"কিছু না। কলকাতার ছয় বছর কিংবা মেলবোর্ন এর পাঁচ বছর আমি বন্ধুত্ব খুব মিস করেছি। মনের অনেক কথা চাপা পরে গেছে অতল গভীরে।"
"কথা গুলো কি এখন আমি জানতে পারি ?"
"না থাক সেসব। দশ বছর কি খুব কমসময় ? এখনো কি আমরা সেই রকম বন্ধু আছি ?"
শ্রীর এবার খুব মনটা খারাপ হলো।সত্যি সে চিঠির উত্তর দেয়নি কারণ তার অভিমান হয়েছিল। তবুও কেন জানিনা সে অপেক্ষায় বসে থাকতো একুশ দিন অন্তর আসা চিঠিগুলোর জন্য। উত্তর না দেওয়ার আরেক কারণ হলো সে মুভ অন করতে চেয়ে ছিল। .....নিজেকে প্রতি মুহূর্তে বোঝানোর চেষ্টা করতো সে তাকে ভালোবাসেনি। ....ভালোবাসা কখনো কি এক পক্ষের হয়?কিন্তু দেড় বছর পর যখন চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায়,রোদক্লান্ত দুপুরে যখন দূর থেকে সাইকেল করে আসা পিওন 'শ্রীতমা সেনগুপ্ত ' বলে ডাকা বন্ধ করে ,নিজের অজান্তে মন খারাপ করে আসে শ্রীর। সে নিজেকে প্রশ্ন করে আদেও কি এক মুহূর্তও সে রক্তিমকে না ভালোবেসে থাকতে পারে ?তাই জন্যই কি যখন সে জানতে পেরেছিল তার বর নিজের সেক্রেটারির সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত, তার মনে একবারের জন্যও কষ্ট হয়নি। তাই কি ও অত সহজে ডিভোর্স পেপারে সই করে দিতে পেরেছিল ?
রক্তিম বললো ,"তা তোর খবর কি ? কি করছিস এখন?"
"ওই তেমন কিছু না একটা ইংরেজি নিউজ পেপারের হয়ে মাঝে সাঝে ফুড ওয়াক করাই ,তার সাথে একটা প্রাইভেট কলেজে পার্ট টাইম পড়াই."
"বাহ্!কোন কলেজ?"
"কাছেই ,বকুল বিশ্ববিদ্যালয় ,মেয়েদের জন্য। ইংলিশ পড়াই। "
"ভালো করেছিস। বাবামার ডিসিশনটা না শুনে ,কেমিস্ট্রি এমনিও হতো না আমাদের!জানিস না ওই সাবজেক্ট টা কিভাবে সেকেন্ড সেমিস্টার এ পাস করেছি। "
শুনে হেসে উঠলো শ্রী ,"তোর কেমিস্ট্রির ভয় এখনো গেলো না"
"আমি না হয় ভয় পাই। তোকে তো কাকু কেমিস্ট্রি অনার্স দিতোই। বেরোলি কিকরে? "
"তেমন কিছু না ,শুধু কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে বাবাকে ব্যাগ থেকে বের করে কানুদার দোকান থেকে জেরক্স করা কেমিস্ট্রির টুকলি গুলো দেখালাম। প্রথমে মারধর করলো তারপর নিজেই ইংরেজি অনার্স এ ভর্তি করিয়ে দিলো "
রক্তিম কথা গুলো শুনতে শুনতে শ্রীর দিকে তাকিয়েছিল। শেষ যেবার কালিম্পঙে গিয়েছিল ও শুনেছিল শ্রীর বিয়ে হয়ে গাছে। শুনে শুনে ভিতরে ভিতরে সে খুব গুটিয়ে গিয়েছিল।কান্নায় ভেঙে পড়া রক্তিম ফোন করে হ্যাঁ বলে দিয়েছিল মেলবোর্ন থেকে আসা চাকরির অফারটাকে। প্রতি মুহূর্তে তার মনে হয়েছিল যে দেশে আমি থাকবো...সেখানে শ্রী ও থাকবে ...শুধু এক হতে পারবোনা আমরা কেউ। এ কটা বছর কলকাতায় থেকে সে বুঝেছে শ্রীর কথা না ভেবে সে এক মুহূর্ত ও থাকতে পারে না। ওর মুখটা মনে পড়লে তার সারা গা শিরশিরিয়ে ওঠে এক অদ্ভুত ভালোলাগায়। বুকের হৃদস্পন্ধন যেন হাজার গুণ বেড়ে যায়।
আজ শ্রী কে দেখে খানিকটা অবাকই হয়েছিল রক্তিম। কারণ শ্রীর শরীরে বিবাহিতের কোনো চিহ্ন সে দেখতে পাইনি। খানিকটা লজ্জা পেয়েই সে শ্রীকে জিজ্ঞাস করলো ,"শুনেছিলাম তোর বিয়ে হয়ে গেছে। তা বর কি করে?"দিয়েছিল।
"হয়েছিল। খানিকটা জোর করেই বাবা বিয়ে পর চাকরি খুঁজে কাটিয়ে দিয়েছি। "
"কাটিয়ে দিয়েছিস মানে?"
"মানে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি...আমার বিবাহিত লাইফ ভালো লাগেনি আর অনির্বাণও ওর সেক্রেটারিকে ভালোবাসতো। "
কথাটা শোনার পর যেন রক্তিম সেই হারিয়ে যাওয়া তার প্রিয় বলপেন টাকে খুঁজে পেলো। বাইরে আকাশে আনন্দে নাচতে নাচতে কতগুলো মেঘ একে ওপরের সাথে ধাক্কা লেগে গর্জে উঠলো,তাদের আনন্দ ধারা আরো জোরে বারিধারা হয়ে নেমে এলো। অপরূপ এক খুশির সুবাসে ভাসলো কলকাতা শহর। দূর চিড়িয়াখানায় ময়ূর পেখম তুলে নাচতে নাচতে ভালোবাসার আহ্বান জানালো তার সঙ্গী ময়ূরীটিকে। রক্তিমের মনের ভিতরে থাকা এককালে পাতা ঝরে যাওয়া গাছটা মরসুমের প্রথম বর্ষণে নতুন কিশলয়ের জন্ম দিল। সদ্য প্রাণ পাওয়া গাছটায় ভালোবাসার কুড়ি ফোটার আবাহন রক্তিম শুনতে পেলো।হাসির রেখা ছড়িয়ে পড়লো তার শরীর জুড়ে।
রক্তিমের মুখে হাসির রেখা দেখে শ্রী জিজ্ঞাসা করলো,"আর তুই ?বিয়ে করিসনি ?"
"আমি !ধুর!...বাবা মা জোর করেছিল বাট আমার অবাদ্ধতায় হার মেনেছে। "
কথাটা শুনে নিজের অতর্কিতেই শ্রী বলে উঠল ,"কেন?"
রক্তিম আলতো করে তাকালো শ্রীর দিকে। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তখনই ওয়েটার এলো। রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো ,"স্যার কাইন্ডলি আপনাদের যদি হয়ে যায় তো ...আসলে এখনই আমি শপ বন্ধ করে দেব....বৃষ্টিরদিন বাড়ি ফিরতে হবে। "
রক্তিম শ্রী র দিকে তাকাতো। শ্রী বললো ,"ওকে , পরে একদিন কথা হবে। এখন চল উঠি , আমার ও বাড়ি ফিরতে হবে। বৃষ্টির দিন বাস-টাস কেমন পাবো? "
বিল পে করে ওরা রাস্তায় বেরিয়ে এলো।রক্তিম শ্রী র দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো ,"কিসে বাড়ি যাবি ?"
শ্রী উত্তর দেয় ," এখন থেকেই বাসের জন্য অপেক্ষা। আর তুই ?"
"অফিস এ একবার যেতে হবে। আজকে রিপোর্ট তা জমা দিলে কাজ শেষ হয়। এরপর অন্য ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ আর আমার ছুটি...."
কথাটা রক্তিম শেষ করতে পারলনা, তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। রক্তিম শ্রীকে "এক মিনিট আসছি" বলে ফোনটা রিসিভ করলো ,"হ্যালো স্যার বলুন...."
দূরে দাঁড়িয়ে শ্রী এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিল রক্তিমের দিকে। রক্তিম কি কোনোদিন তাকে ভালোবেসেছে ?এই প্রশ্ন বার বার উঁকি দিতে থাকলো তার মনে। যদি ভালোবাসতই তাহলে এইভাবে বৃষ্টির মধ্যে তার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলতো ?এসব চিন্তা করতে করতে দূরে একটা বাসের রেখা ফুটে উঠল। কিছুক্ষনের মধ্যে বাসটা শ্রীর কাছে চলে এলে শ্রী ভাবলো যে বাসটা কে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না যা বৃষ্টি বাদলের দিন। সে দৌড়ে রক্তিম এর কাছে চলে যেতে চাইলো 'আসছি' বলতে ,তখন হঠাৎ শুনতে পেলো রক্তিম ফোনে কাকে বলছে,"স্যার এই তো বাড়ি ফিরলাম আর আপনি বলছেন সামনের সপ্তাহেই নরওয়ে যেতে হবে দশ বছরের জন্য। ইম্পসিবল!...হোয়াট?না হলে..."
শ্রী হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো ,"রক্তিম আমি আসছি রে....বাস এসে গেছে... বাই " বলে সে হাত দিয়ে বাসটাকে দাঁড় করিয়ে তাতে উঠে পড়লো |
ব্যাপারটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে রক্তিম কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসটা ছেড়ে দিলো। রক্তিম “একটু পরে করছি” বলে ফোনটা রেখে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের জালনায় শ্রীকে দেখতে পেল। বেসরকারি বাসগুলোর এই অবস্থা একটু আগে এখানে দাঁড়ালো,একশো মিটার যেতে না যেতে আবার প্যাসেঞ্জার তুলবে।রক্তিম ভাবলো এই শেষ সময় এত বছরের বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার ভয়ে যে কথাগুলো বলা হয়ে উঠল না তা আজ তাকে বলতেই হবে। এখন তো তাদের দুজনের কোনো পিছুটান বা বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার ভয়ও নেই। আজ না বলতে পারলে আরো হাজার বছর তাকে কথাগুলোকে বুকে বয়ে নিয়ে চলতে হবে। সেই ভুল সে আজ আর করবে না। আজ তাকে বলতেই হবে। রক্তিম যখন বাসটার দিকে দৌড়াতে শুরু করলো তখন বাসটা ছেড়ে দিয়েছিল। সে প্রাণপণে দৌড়াতে থাকলো 'রোকো রোকো'বলে। তবু সেই বাসটা থামলো না...চলে যেতে থাকলো দূরে… অনেক দূরে। বৃষ্টির ছাট লাগা চশমা টাকে মুছতে মুছতে জালনাটা দিয়ে পিছনে তাকিয়ে সে দূরে আবছা দেখতে পেলো একটা অবয়ব… হয়তো কোনো ছেলে দুহাতে মুখ ঢেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অবয়বটা কার?একবার তার মনে হলো রক্তিম নাকি?কিন্তু তার তো ঠিক করে বাই বলারও সময় নেই। ব্যাপারটাকে আমল না দিয়ে সে চশমা মোছায় মন দিল । একবারও আর ফিরে তাকালো না বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকা রক্তিমের দিকে। একবার ক্লাস নাইন এর স্কুল স্পোর্টস-এ রক্তিম দুশো মিটার রেসে প্রথম হয়েছিল। কিন্তু আজ জীবনের রেসে সে হেরে গেল। কিন্তু রক্তিম ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, জীবনের রেসেও তাকে জিততে হবে ,জিততেই হবে। ।
৩
বকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের কাছে রক্তিম এসে দাঁড়ালো। শ্রীর কথা অনুযায়ী সে এখানে ইংরেজি পড়ায়। সাথে নিয়ে এসেছে শ্রী র প্রিয় এক গুচ্ছ লিলি ফুল।
রক্তিম-এর কাছে আজ সকালটা মোটেই অন্য দিনের মতো ছিল না। যে রক্তিমের সকাল নটা না বাজলে ঘুম ভাঙতো না সেই রক্তিমই আজ ভোর ছটার সময় উঠে সারা কলকাতা চষে বেরিয়েছে লিলিফুল খোঁজার জন্য।শেষমেশ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে হাওড়া ব্রিজের কাছে ফুল মার্কেট এ খুঁজে পেয়েছে শ্রীর প্রিয় লিলিফুলগুলোকে। কাল রাত থেকেই এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছিল সারা শরীর জুড়ে। নিজের অজান্তেই হেসে ফেলছিল বিনাকারণে। এক গভীর প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছিল তার মন। রাতজাগা স্বপ্নেরা আজ পরিপূর্ণতা পেতে চাইছিল কিছু না বলা কথা বলে ওঠার মধ্যে দিয়ে।
এখন অবশ্য সে বড়োই নার্ভাস। মনের মধ্যে এক অনিশ্চিয়তা তাকে বারবার কুরে কুরে খাচ্ছে –‘যদি না বলে দেয়?’ তবু তার আত্মবিশ্বাস তাকে বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছিল-রক্তিম ব্যানার্জি আজ তোমাকে বলতেই হবে ,এই পাথর আর কত দিন মনের মধ্যে নিয়ে তুমি বইবে?
জোরে একবার শ্বাস নিয়ে রক্তিম কলেজের অফিস ঘরের দিকে চলে গেল। কলেজটা বেশ বড়ো। সব মিলিয়ে তিনটে বিল্ডিং সাথে হোস্টেল খেলার মাঠ অডিটোরিয়াম। রক্তিম সোজা প্রিন্সিপাল এর ঘরের কাছে চলে এলো। হাতের ফুলের তোড়াটা ব্যাগে ঢুকিয়ে বললো ,"ম্যাডাম ,আসতে পারি?"
"ইয়েস, কাম ইন। "
"ম্যাম,আমি রক্তিম "বলে নিজের কার্ড টা প্রিন্সিপাল এর দিকে বাড়িয়ে দিলো।
কার্ডটা পড়ে প্রিন্সিপালের চোখ দুটো বড়ো হয়ে উঠলো। সে বললো ,"আরে রক্তিমবাবু বসুন বসুন।"
"ম্যাডাম আসলে শ্রীতমা ম্যাডাম এর সাথে একটু দরকার তাই। "
প্রিন্সিপ্যাল হাত দিয়ে পাশে রাখা বেলটাকে টিপলো। একটা পিওন সদৃশ লোক ঘরে প্রবেশ করলো। প্রিন্সিপাল তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো ,"রমেশ, শ্রীতমা ম্যাডাম কোথায়?"
"ওনাকে তো ছাদের দিকে যেতে দেখলাম।......ডেকে দেব ?"
রক্তিম কথায় বাঁধা দিয়ে বললো ,"নানা আপনি ছাদের সিঁড়ি দেখিয়ে দিন আমি চলে যাবো। আসলে অনেকদিন পর আমি কলকাতায় ফিরছি ওকে সারপ্রাইস দিতাম।"বলে রক্তিম প্রিন্সিপাল ম্যামের দিকে তাকালো।
প্রিসিপাল ম্যাডাম বললো,"রমেশ ওনাকে সিঁড়ি অবধি পৌঁছিয়ে দিয়ে এসো।“
সিঁড়ির কাছে পৌঁছে দিয়ে রমেশ বললো,"সোজা উঠে যান "
"ঠিক আছে। ধন্যবাদ। "
বলে রক্তিম সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো। সিঁড়ির দরজার কাছে এসে ব্যাগ থেকে লিলিফুলের তোড়াটা বের করলো।ব্যাগ থেকে মাউথ ফ্রেশনার বের করে মুখে দুবার স্প্রে করলো। তারপর ছাদে উঠলো। কিন্তু সে ছাদে কাউকে দেখতে পেল না শুধু দূরের চিলেকোঠার ঘর ছাড়া। সে দিকেই সে এগোলো। দেখলো দরজা আলতো করে ভেজানো। দরজাটা হালকা করে একটু খুলতেই রক্তিম চমকে উঠলো। ঘরের ভিতরে শ্রী জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক বছর পঁয়ত্রিশের যুবককে।
একমুহূর্তে রক্তিমের হাত পা অবশ হয়ে উঠলো। আবারো যেন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। জীবনে যে জিনিসটাকে সে সবার চেয়ে ভালোবেসেছে , যাকে সে সারাজীবন নিজের করে ভেবেছে , যার কথা চিন্তা করে এখনো সে খোঁজ পায় সেই অন্যন্য অনুভুতির , তাকে অন্য কারোর সাথে দেখে সে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না, প্রবল ঘৃণা- ভালোবাসা তার চোখ থেকে নেমে এলো অশ্রুধারা হয়ে। হাতের ফুলতোড়াটা ফেলে দিয়ে প্রাণপণে সে জায়গাটা ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
দরজার পাশে একটা 'খুট' করে আওয়াজ শুনে শ্রী একটু দূরে সরে গিয়ে অনামিত্রকে বললো ,"দরজায় হয়তো কেউ ছিল"
কে ছিল দেখার জন্য সে যখন দরজা দিয়ে বেরোতে যাবে তখন পায়ের কাছে লিলিফুলের তোড়াটা দেখতে পেলো। সে যে লিলিফুল ভালোবাসে তা রক্তিম ছাড়া কেউ জানেও না। আর এই শহরে আসার পরের অনেকগুলো বছর কেটে গেছে সে লিলিফুল দেখেনি। তাহলে কি....
কাল বাড়ি ফিরে শ্রী একলা হয়ে অনেকটা রাত জেগে কাটিয়ে ছিল। তার হাতে থাকা ফোনে সারাক্ষণ জুড়ে ছিল তার আর রক্তিমের ফেয়ারওয়েল-এর দিনের স্ক্যান করা ফটোটা। রাত পৌনে একটা নাগাদ টুং শব্দ করে ম্যাসেজটা ঢুকেছিল। অনামিত্র করেছে ,"কি গো কিছু ভাবলে ?"
অনামিত্র কে সে তার কলেজ টাইম থেকে চিনতো । কলেজ ক্যান্টিনে বসে শ্রী যখন এক মনে চিঠিগুলোর কথা ভাবতো সে লক্ষ্য করেছিল এক জোড়া চোখ অনবরত তাকে দেখে চলেছে কিন্তু সে পাত্তা দেয়নি । একবার অনুসূয়া মুখ থেকে শুনেছিলো যে অনমিত্র শ্রী কে পছন্দ করে । শ্রী সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিল অনুসূয়া কে যে তার মন প্রাণ জুড়ে রয়েছে অন্য কেউ।
সেই অনামিত্রর সাথে আবার নাকি শ্রীর দেখা হলো এতো বছর পর চাকরি করতে এসে । তাকে দেখে অনামিত্রও দেরি করেনি বেশি , দুসপ্তাহ আগে হঠাৎই একদিন অনামিত্র তার দিকে হাঁটুমুড়ে বসে বলেছিল,"আমি তোমাকে ভালোবাসি "
সরাসারি পাশ কাটিয়ে না দিয়ে শ্রী বলেছিলো ," আমাকে দিন পনেরো সময় দাও ভেবে দেখার । "
কাল রাতে যখন তার খুব মন খারাপ ছিল। যখন রক্তিমের তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফোনে ব্যাস্ত হয়ে পড়াটা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো। যখন তার মনে হয়েছিল তার আর রক্তিমের দূরত্ব আরো দশটা বছরের হয়ে গেল ,তখন এই ম্যাসেজ তাকে ভাবিয়েছিল। তার মনে হয়েছিল এতগুলো বছর সে থাকবে কাকে নিয়ে ? কত বছরই বা সে দৌড়াবে বুনো হাঁস এর মতো রক্তিম এর জন্য , যে তাকে ভালোবাসেনি কোনোদিন । তার কথা ভেবে হবেই বা কি , তার চেয়ে তাকে যে ভালোবাসে সে তাকে অনেক ভালো রাখতে পারবে কারণ ভালোবাসাই তো পারে একজন কে ভালো রাখতে ;হতে পারে এই সম্পর্ক টা টিকে যাবে আর এ কদিনে সে বুঝতে পেরেছে অনামিত্র তাকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে যেমনটা সে বাসতো রক্তিমকে। সে নিজে এতো বছর যে কষ্ট পেয়েছে ,সে চায় না এরকম কষ্ট কেউ পাক আর হতেও পারে অনামিত্রর সাথে থেকে সে বুঝতে পারবে ভালোবাসার নতুন মানে , বিয়ের পরও তো ভালোবাসা হয় এমন কত গল্প সে দেখেছে পড়েছে ,তাই অগত্যা এই সিদ্ধান্ত।
হাঁটতে হাঁটতে যখন শ্রী ছাদের কার্নিশে পৌঁছলো ,তখন দূর থেকে সে দেখতে পেলো একটা নীলসাদা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রক্তিম ছুটে কলেজ-এর গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। দূর থেকে দেখেও শ্রী বুঝতে পারলো রক্তিমের চোখে জল। নিজের অজান্তে তারও চোখের কোণ চিকচিক করে উঠল।
তারপর?...তারপর পাথর জমতে জমতে যে পাহাড় তৈরী হয়েছিল তা আজ পর্বতের রূপ নিল। খরস্রোতা নদীটিতে পলি সঞ্চিত হতে হতে একদিন সে তার গতিপথ হারালো আর সে জায়গায় গজিয়ে উঠলো অবাধ্য চরাচর।একটা চুম্বক তার প্রকৃত ধর্ম হারিয়ে উত্তরমেরু উত্তরমেরুকে আকর্ষণ করলো।উদাসীন অঞ্চল আরো উদাসীন হয়ে উঠলো। কিন্তু কেউ নজর দিল না একপাশে পরে থাকা দক্ষিণ মেরুর দিকে। সবার অজান্তে সে চুপিচুপি শহর ছেড়ে পালিয়ে গেল সূর্যোদয়ের দেশে। তার আর কান্না পেল না। ক্রমশ শক্তি হারাতে হারাতে সে পাথরে পরিণত হলো। নিঃশব্দেরা গল্প লিখলো। দূর থেকে জোনাকি হতে দেখা গেল কলকাতার পড়ে থাকা ঘর বাড়ি গুলোকে। শুধু স্মৃতি সঙ্গী হলো একমাত্র বেঁচে থাকার রসদ হিসাবে।