অনেকেই বলে কিছু সন্দেহ, সন্দেহ থেকে যাওয়াই ভালো। কিছু অজানা প্রশ্নের উত্তর অজানা থেকে যাওয়াই ভালো। কিছু কিছু সময় মানুষের সন্দেহ এবং সত্য জানার ইচ্ছা মানুষের কি পরিণতি করতে পারে তারই এক ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।শহর থেকে কিছু দূরে অবস্থিত একটি স্কুল কে কেন্দ্র করে এই ঘটনা। জায়গাটার অনেক কুখ্যাতি থাকায় লোক বসতি খুব একটা সেখানে গড়ে ওঠেনি। কিন্তু শহরে জায়গার অভাব হওয়ায় সেখানে স্কুলটি গড়ে ওঠে। শোনা যায় একসময় নাকি সেই জায়গাটা স্বাধীনতা আন্দোলনে রত বিদ্রোহীদের ঘাঁটি ছিল, একদিন ইংরেজরা সেই ঘাঁটির খবর পায় এবং যথারীতি সেখানে গিয়ে সমস্ত বিদ্রোহীদের হত্যা করে। তার বহু পরে ইংরেজদের আমলেই সেখানে এই স্কুল গড়ে ওঠে।

এবার আসি ওই জায়গার কুখ্যাতির ব্যাপারে, স্কুল স্থাপনের পরপরই লোভী প্রোমোটার সেই অঞ্চলে কিছু সংখ্যক ফ্ল্যাট তৈরি করে এবং লোকজনের থাকার ব্যবস্থা করে। দিনের বেলায় সেখানে সব ঠিকঠাকই থাকতো কিন্তু রাত্রি বেলায় দেখা দিত সমস্যা। ওখানে যারা থাকতো তাদের অনেকের মুখে নাকি শোনা যায় রাত্রে বেলায় কিছু অলৌকিক ঘটনা তারা প্রত্যক্ষ করেন, আর এই ঘটনাগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল সেই স্কুল।ফলে শীঘ্রই সেই ফ্ল্যাট গুলি জনশূন্য হয়ে পরে।লোকমুখে নাকি শোনা যায় প্রতি রাত্রে স্কুলে নাকি ভয়ানক কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটত। এইবার স্কুলটার একটু বিবরণ শুনে নেওয়া যাক। প্রায় দুই বিঘা জমি নিয়ে স্কুল, স্কুলের চারদিকে প্রাচীর দেওয়া এবং প্রবেশদ্বারে একটি বড় লোহার গেট। গেট এর পরেই রয়েছে স্কুলের উদ্যান। তারপর একটি স্ট্যাচু এবং তার পিছনে মেন বিল্ডিং। স্কুলের প্রতিষ্ঠা থেকে স্কুলের মেন বিল্ডিং এর সামনে রয়েছে এই স্ট্যাচু। স্ট্যাচুটি ঠিক কার কেউ বলতে পারে না, কিন্তু এটি যে কোন ইংরেজ সাহেবের এই নিয়ে কোন দ্বিমত নেই, আর ইংরেজরাই যেহেতু এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছে তাই কোন ইংরেজ সাহেবের স্ট্যাচু হওয়াই স্বাভাবিক। স্কুলের মেন বিল্ডিং তিন তলা,স্ট্যাচুর পিছনেই রয়েছে স্কুলের মেন বিল্ডিং এর প্রবেশদ্বার, কিছু সিঁড়ি পেরিয়ে সেই প্রবেশদ্বার দিয়েই স্কুলে প্রবেশ করতে হয়। একতলা ও দোতলায় পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীর পঠন-পাঠন হয় এবং তৃতীয় তলার এক অংশে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর কলা বিভাগের এবং অপর অংশে বিজ্ঞান বিভাগের পঠন-পাঠন হয়। স্কুলের সমস্ত ল্যাবরেটরী তৃতীয় তলাতেই রয়েছে এবং ছাদের উপর রয়েছে জলাধার ও একটি ষ্টোর রুম। এই স্কুলেই ঘটতো এমন পাঁচটি অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ লোকমুখে শোনা যায়:

প্রথম ঘটনা: রাত্রি হলে স্ট্যাচু আর স্ট্যাচুর জায়গায় থাকে না সেটি স্কুলের সামনের ফাঁকা উদ্যানে ঘোরাফেরা করে।

দ্বিতীয় ঘটনা: স্কুলের মেন বিল্ডিং এ প্রবেশের যে সিঁড়ি রাত্রে বেলায় তাতে এক গন্ডগোল দেখা যায়। সেটি হল ওঠার সময় সিঁড়িতে যতগুলি ধাপ থাকে নামার সময় নাকি একটি ধাপ কম হয়ে যায়।

তৃতীয় ঘটনা: দোতলার পূর্ব দিকের একদম কোনার রুমটায় রাত্রেবেলা নাকি বোর্ডে চক ও ডাস্টারের আওয়াজ পাওয়া যায়। কিন্তু সেই মুহূর্তে তো গোটা স্কুলে কেউ থাকেনা তাহলে আওয়াজটি কিসের?

চতুর্থ ঘটনা: তৃতীয় তলার কেমিস্ট্রি ল্যাবের কল চালালে কল দিয়ে জলের বদলে রক্ত বের হয়।

পঞ্চম এবং সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা তৃতীয় তলার মেয়েদের বাথরুমের একদম শেষ বাথরুমে প্রবেশ করলে বাথরুমের উপর থেকে একটি দড়ি নেমে আসে এবং সেই দড়ি বাথরুমে অবস্থিত ব্যক্তির গলায় নিজে থেকে পেঁচিয়ে যায় এবং দড়িটি ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে অর্থাৎ ব্যক্তিটি মারা যায়।

 

সেই স্কুলে অসংখ্য ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে একাদশ শ্রেণীর চারজন ছাত্র প্রচন্ড ভালো বন্ধু ছিল এবং তাদের মধ্যে তিনজন খুব সাহসীও ছিল। সেই স্কুলের ছাত্র হওয়ায় তারা যথারীতি এই অলৌকিক ঘটনা গুলো সম্পর্কে শুনেছে যদিও তারা কেউই এই কথা কোনদিনই বিশ্বাস করত না তাও তারা একদিন পুরো জিনিসটাকে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিল এবং তার জন্য তারা প্ল্যান করল যে স্কুলের চাবি গুলি নকল করতে হবে। তাদের মধ্যে একজন এর বিরোধিতা করলেও বাকি তিনজন তাকে ভীতু বলে চুপ করিয়ে দিল। অবশেষে চাবি গুলির নকল তৈরি করে নেওয়ার পর একদিন রাতে তারা বাড়ি থেকে মিথ্যা কথা বলে স্কুলের দিকে রওনা দিল। যখন তারা স্কুলে পৌঁছাল তখন বাজে রাত বারোটা। চারিদিক স্বভাবতই নিস্তব্ধ, তারা স্কুলের প্রবেশদ্বারের লোহার গেট টপকে স্কুলের উদ্যানের মধ্যে প্রবেশ করল।

প্রথমেই তারা চলে গেল স্ট্যাচুর দিকে,গিয়ে দেখল নিজের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে, তারা ভালভাবে স্ট্যাচুটিকে পর্যবেক্ষণ করল স্ট্যাচু টি বাঁ দিকে চোখ করে একদম ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। অর্থাৎ প্রথম গুজবটি মিথ্যে।

 

তখন তাদের মধ্যে ভীতু বন্ধুটি বলে উঠলো "আমরা তো প্রমাণ পেয়েই গেলাম যে প্রথম ঘটনাটি গুজব -তাহলে বাকি ঘটনা গুলোও সব গুজব, কোনটাই সত্যি নয়।তাহলে এবার বাড়ি ফেরা যাক", কিন্তু বাকিরা নাছরবান্দা -তারা সবগুলো পরীক্ষা করে তবেই বাড়ি ফিরবে।

এবার তারা মেন বিল্ডিং এ প্রবেশ করবে তারা প্রথমে উপরে ওঠার সময় সিঁড়ির ধাপগুলো গুনলো এবং তারপর নিচে নামার সময় আবার ধাপগুলো গুনলো। প্রত্যেকবারই দেখা গেল সেটি তে মোট ১৩টি ধাপ রয়েছে, অর্থাৎ দ্বিতীয় গুজবটি ও মিথ্যে। এবার পালা দোতলায় সেই ক্লাস রুমের। তারা চারজন যথারীতি ক্লাস রুমে প্রবেশ করল, কিন্তু একি, ক্লাস রুম তো পুরো নিস্তব্ধ -বোর্ডও একদম পরিষ্কার। অর্থাৎ তৃতীয় গুজবও মিথ্যে।

 

এবার পালা তৃতীয় তলার কেমিস্ট্রি ল্যাবের। তারা কেমিস্ট্রি ল্যাবে প্রবেশ করে সবকটা কলই খুললো। কিন্তু সবগুলো কল থেকেই স্বাভাবিক ভাবেই জল বেরোচ্ছে। অর্থাৎ চতুর্থ গুজবও মিথ্যে। 

এবার পালা পঞ্চম অর্থাৎ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গুজব পরীক্ষার। এই গুজব পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন, তা তো অবশ্যই কারণ আগের গুজব গুলি পরীক্ষা করতে কারোর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি কিন্তু এই গুজব সত্যি প্রমাণিত হলে একজনের জীবন চলে যাবে। তাই স্বভাবতই সবার একটু ভয় ভয় করছিল তখন ভীতু বন্ধুটি আবার তাদেরকে বলল "বন্ধুরা দেখলে তো সব কিছুই মিথ্যে চলো আমরা এবার বাড়ি ফিরে যাই।" কিন্তু বাকি তিনজন শেষ গুজবও পরীক্ষা না করে কোনভাবে ফিরবে না। অবশেষে তারা মেয়েদের বাথরুমগুলির বাইরে এসে দাঁড়ালো, কিন্তু ভিতরে কে যাবে এবার?? অবশেষে সেই সাহসী তিনজনের মধ্যে একজন যেতে রাজি হলো। সে যথারীতি প্রবেশ করলো বাথরুমে এবং দরজা বন্ধ করলো। বাকি তিনজনের মনের মধ্যে তখন চরম উৎকন্ঠা কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সে বহাল তবিয়তেই বাইরে বেরিয়ে এলো। অর্থাৎ পঞ্চম গুজবও মিথ্যে।

অবশেষে তারা তাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে সবাই নিজের নিজের বাড়ির দিকে ফিরে গেল।

পরেরদিন সকাল হতেই তাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই এল ফোন। চতুর্থ বন্ধু অর্থাৎ যে বাথরুমে ঢুকে ছিল সে নাকি এখনো বাড়ি ফেরেনি। বাকি তিন বন্ধু প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। সে কেন এখনো বাড়ি ফেরেনি তার কোন কারন তারা বুঝতে পারল না। বাধ্য হয়ে তারা তাদের অভিভাবকদের তাদের গত রাতের স্কুল অভিযানের কথা বলল। গার্জেনরাও স্কুলে উপস্থিত হল।

 

তৎক্ষণাৎ পুলিশ ও স্কুলের হেডমাস্টার এর সঙ্গে যোগাযোগ করে একসাথে সবাই মিলে স্কুলে ঢোকার পরে সেই বন্ধু তিনটি যা দেখলো তাতে তারা সম্পূর্ণ অবাক হয়ে পরলো। সেই স্ট্যাচু টি গতকাল বাঁ দিকে চোখ করেছিল আজকের ডান দিকে চোখ করে তাকিয়ে আছে।

তারা সেই কথা সবাইকে বলল। এরপর মেন বিল্ডিং এ প্রবেশের সিঁড়ি গুলোতে যা হলো তাতে তারা আরো আশ্চর্য হয়ে পরলো। একি! সিঁড়িতে তো মাত্র 12 টি ধাপ।

তারা দৌড়ে দোতলার সেই পূর্বদিকের ঘরে প্রবেশ করল। তারা দেখল পুরো বোর্ডে অংক কষা রয়েছে। তাদের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়ল।

এরপরে তারা গেলো ল্যাবরেটরীতে সেখানে তারা দেখতে পেল আরো এক ভয়াবহ দৃশ্য, প্রতিটি বেসিনে লেগে রয়েছে রক্তের দাগ এবং সেগুলি খুব একটা পুরোনো নয়। অর্থাৎ গুজব গুলো একে একে সব সত্যি হচ্ছে।

তারা পরবর্তী গুজবের কথা মনে করে আরো ভয়ার্ত হয়ে পরল তৎক্ষণাৎ তারা সবাই মিলে ছুটে গেল মেয়েদের বাথরুমে। শেষ বাথরুমটি খোলা মাত্রই সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য। চতুর্থ বন্ধুটি গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে এবং তার সমগ্র শরীর ক্ষতবিক্ষত। দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন তার সমগ্র শরীর নখ দিয়ে চিরে দিয়েছে।


সে দৃশ্য দেখা মাত্রই এক বন্ধু অজ্ঞান হয়ে পরলো, অপর এক বন্ধু সম্পূর্ণরূপে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল, আর তৃতীয় বন্ধুর মুখে শুধু একটি প্রলাপ "ওতো আমাদের সঙ্গেই কালকে  স্কুল থেকে বেরোলো", "ওতো আমাদের সঙ্গেই কালকে স্কুল থেকে বেরোলো"…